TECH GURU, TECH-SCIENCE NEWS

"I celebrate myself, and sing myself,
and what I assume you shall assume,
for every atom belonging to me as good belongs to you."

Friday, September 28, 2012

সন্দেহের ঘেরাটোপে হিনা-বিলাওয়ালের প্রেম



পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে খবর ছড়িয়েছে। বিদেশি পত্রিকাগুলো বাংলাদেশি ইংরেজি সাপ্তাহিক ট্যাবলয়েড ‘ব্লিটজ’-এ প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে সংবাদ পরিবেশন করেছে। 
প্রতিবেদনে বলা হয়, হিনা ও বিলাওয়ালের মধ্যে প্রেমের বিষয়টি নিয়ে ভুট্টো পরিবারে শীতল যুদ্ধ চলছে। বাবা আসিফ আলী জারদারি (পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট) চান না বিলাওয়াল তাঁর চেয়ে ১১ বছরে বড় এবং দুই মেয়ের মা হিনাকে বিয়ে করেন। অথচ বিলাওয়াল নাছোড়বান্দা। প্রয়োজনে তিনি পিপিপি ছাড়বেন, রাজনীতি ছাড়বেন, কিন্তু হিনাকে বিয়ে করে পাড়ি দেবেন সুইজারল্যান্ডে।
হিনার পরিবারেরও সমস্যা চলছে। গত বছর স্বামীর পরকীয়ার সূত্র ধরে কোটিপতি স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিনা খুব দ্রুত বিয়ে ভেঙে দিতে চান। আর এরপর হয়তো থেকে যাবেন বিলাওয়ালের সঙ্গে। বাবা আসিফ আলী জারদারি ছেলেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের ভেতরে হিনার সঙ্গে বিলাওয়ালকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলার পর থেকে ক্ষুব্ধ। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ নিয়ে হিনার সঙ্গে তাঁর বচসাও হয়েছে। ফলাফলে হিনাকে ক্ষমতা ছাড়তেও হতে পারে। তবে এ বচসা আরও বেশি ক্ষুব্ধ করে তুলেছে বিলাওয়ালকে। এ বিষয়ে একটা হেস্তনেস্ত তিনি হয়তো করেই ফেলবেন।

সত্যি-মিথ্যার বিতর্ক
অভিজাত প্রেমের এ খবরটি পাকিস্তানের প্রধান সংবাদপত্র বা প্রচারমাধ্যমগুলোতে স্থান পায়নি। তবে ভারত ও বাংলাদেশের অনেক দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়েছে। বাংলাদেশে ইংরেজি পত্রিকাগুলো খুব বেশি পরিচিত নয়। ইংরেজি ট্যাবলয়েড এখানে আরও অপরিচিত। তবে ‘ব্লিটজ’ খবরটি ছড়িয়ে দিয়ে নিশ্চিতভাবে সাড়া জাগিয়েছে। সাধারণত পাকিস্তানের অভিজাতদের নিয়ে এর আগে খবর প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের ‘ডেইলি মেইল’, ‘সান’-এর মতো বিশ্বখ্যাত ট্যাবলয়েডগুলো কিংবা ভারত বা পাকিস্তানের কোনো পত্রিকা। কিন্তু এবার বাংলাদেশের স্বল্প পরিচিত পত্রিকাটি বিশ্বকাঁপানো খবরটির জন্ম দিয়ে প্রমাণ করল, খবর সব জায়গাতেই হতে পারে।
কিন্তু খবরটি কতটুকু সত্য, তা নিয়ে পাঠকমহলে সংশয় থেকেই গেছে। এমন কথা বলা হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এর এক খবরে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্ভি নামের এক ব্লগার লিখেছেন, ‘এ খবর মিথ্যা। এটা এত অসত্য যে কখনোই সত্যি হতে পারে না।’ সুরেশ নামের আরেকজন ব্লগারকে নিজেকে বিলাওয়ালের পারিবারিক বন্ধু দাবি করে লিখেছেন, ‘বিলাওয়াল এক “অতৃপ্ত আত্মা” যে এখনো নিজেকে খুঁজে ফিরছে। তাই এমন অবস্থায় তাঁর পক্ষে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো অসম্ভব।’ তানজীন জাভেদ নামের এক পাকিস্তানিও একই কথা বলেছেন। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেকের ধারণা ‘যা রটে, তার কিছু তো বটে’।
পাকিস্তানের পত্রিকা ‘দ্য নেশন’-এর সম্পাদক সেলিম বোখারিকে উদ্ধৃত করে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এর খবরে বলা হয়, খবরটি চেপে যাওয়ার জন্য সরকার প্রচারমাধ্যমকে কোনো চাপ দিচ্ছে না। যারা খবরটি প্রচার করেনি, সেটি তাদের ইচ্ছায়। এর বাইরে আইনি ঝামেলাও আছে। এর আগে জং গ্রুপের একটি সংবাদে প্রেসিডেন্ট জারদারির বিয়ে নিয়ে গুঞ্জন ছড়ানো হয়। খবরটিতে বলা হয়েছিল, জারদারি গোপনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক নারী চিকিত্সককে বিয়ে করেছেন। এই খবর প্রচার করায় জং গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন জারদারি।
‘পাকিস্তান টাইমস’-এর ব্লগে আজ বৃহস্পতিবার খুররম রেহমান নামের একজন বলেছেন, ‘এটি মিথ্যা’। ফারুক রেহমান নামের আরেকজন পাঠক বলেছেন, খবরটি যে মিথ্যা তার প্রমাণ এটি ফাঁস করেছে বাংলাদেশি একটি পত্রিকা। তিনি দাবি করেছেন, হিনা রাব্বানি বাংলাদেশে জনপ্রিয় এবং এখানে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তাঁকে ফলো করে। তবে এরপর অনেক মন্তব্যকারী তাঁর বক্তব্য খণ্ডন করে বলেছেন, বাংলাদেশে হিনার তেমন কোনো জনপ্রিয়তা নেই।
পাকিস্তানের অনলাইন পত্রিকা দ্য খুজায় ২৪ সেপ্টেম্বর এক খবরে বলা হয়, ‘কর্মকর্তারা মনে করেন, হিনা রাব্বানি ও বিলাওয়াল ভুট্টোর প্রেমের খবরটি সাজানো, গোঁজামিল দেওয়া এবং পাকিস্তানের গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তাঁরা মনে করেন, কিছু প্রথম সারির নেতা এ বুদ্ধির খেলায় উসকানি জোগাচ্ছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য হলো পাকিস্তান সরকারকে আন্তর্জাতিক মহলে লজ্জিত করা। খবরটি প্রথমে টুইটারে প্রচারিত হয়। এরপর অনেক ব্লগার, ই-পেপার ও সংবাদপত্র খবরটি প্রচার করে। এসব খবরের কোথাও ‘পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নাম’ প্রকাশ করা হয়নি বা নির্ভর করার মতো কোনো সূত্রের নাম উল্লেখ করা হয়নি। যখন প্রেসিডেন্ট জারদারি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন, তখন এ খবরটির প্রচার অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এক খবরে আজ বলা হয়, হিনা রাব্বানির স্বামী ফিরোজ গুলজার তাঁর স্ত্রীকে জড়িয়ে প্রকাশিত খবরগুলোকে ‘উচ্ছিষ্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। পাকিস্তানের জিও নিউজকে ফিরোজ বলেন, ওই খবরগুলোর কোনো সত্যতা নেই। তিনি বলেন, ওই খবরগুলোকে ‘প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়’ এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে প্রচারিত খবরগুলো সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে আগ্রহী নন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের একটি স্বল্প পরিচিত ট্যাবলয়েডে কোনো প্রমাণ ছাড়াই প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির ছেলে বিলাওয়ালের সঙ্গে হিনার প্রেমের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সেটির সত্যতা বিষয়ে সন্দেহ থেকে গিয়েছিল।’
‘ব্লিটজ’-এ প্রকাশিত ‘কোল্ড ওয়্যার ইনসাইড পাকিস্তানি প্রেসিডেন্টশিয়াল প্যালেস’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে তিন ধরনের সূত্রের উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ‘জারদারি পরিবারের নির্ভরযোগ্য সূত্র’, তৃতীয় অনুচ্ছেদে ‘গোয়েন্দা সূত্রের’ উল্লেখ করা হয়েছে এবং পঞ্চম অনুচ্ছেদে ‘এক পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের’ বরাত দেওয়া হয়েছে। তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কোন দেশের বা কোন ধরনের, তার কোনো বর্ণনা নেই। 
তবে, ‘ব্লিটজ’-এর প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন সম্পর্কে আরেকটি অভিযোগ সামনে এসেছে। সেটি হলো কুম্ভিলকবৃত্তির। অর্থাত্ প্রতিবেদক সূত্র উল্লেখ করা ছাড়াই উইকিপিডিয়া ও ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ থেকে হুবহু বসিয়ে দিয়েছেন নিজের লেখায়। 
গতকাল বুধবার ‘ব্লিটজ’-এর অনলাইনে গিয়ে দেখা গেছে, ট্যাবলয়েডটির ভলিউম ৭ এর ৩৭ নম্বর ইস্যুতে ‘কোল্ড ওয়্যার ইনসাইড পাকিস্তানি প্রেসিডেন্টশিয়াল প্যালেস’ (পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ভবনের অভ্যন্তরে শীতল যুদ্ধ) শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকাটির ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায়, সেটি প্রীতা মেমন নামের একজন প্রতিবেদকের। ‘বাই লাইনের’ নিচে তারিখ দেওয়া আছে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২। এর আগের দিন ‘ব্লিটজ’-এ আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, সেটিও প্রীতা মেননের। শিরেনাম ‘হাই প্রোফাইল রোমান্স ইন পাকিস্তান এক্সপোজড’ (পাকিস্তানে অভিজাতদের মধ্যে প্রেমের খবর ফাঁস)। তবে এ প্রতিবেদনটি ‘পাকিস্তান ডিফেন্স’ নামের একটি ওয়েবসাইটেও সেদিন প্রকাশিত হয়। এর ঠিকানা www.defence.pk। এ প্রতিবেদনটির প্রথম অনুচ্ছেদের ‘ফিউডাল অ্যান্ড ল্যান্ডওনার ফ্যামিলি’ অংশ থেকে চতুর্থ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত পুরো অংশটি কপি করা হয়েছে উইকিপিডিয়া থেকে, সূত্র উল্লেখ না করেই। এ অংশে হিনার ব্যক্তিগত জীবন, শিক্ষা, রাজনীতিচর্চা ইত্যাদির বর্ণনা ছিল।
‘কোল্ড ওয়্যার ইনসাইড পাকিস্তানি প্রেসিডেন্টশিয়াল প্যালেস’ শিরোনামের প্রতিবেদনটির অনুচ্ছেদ ছয়টি। এর মধ্যে ষষ্ঠ অনুচ্ছেদের ‘ইন ১৯৯৪, এক্সিকিউটিভস অব দ্য টু সুইস কোম্পানিজ রোট’ অংশ থেকে ‘মেকিং মোর দ্যান ইউএস ডলার ১৩১ মিলিয়ন’ অংশটি কপি করা হয়েছে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে।
১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি নিউইয়র্ক টাইমসে পুলিত্জারজয়ী ব্রিটিশ সাংবাদিক জন এফ বার্নসের ‘হাউস অব গ্রাফট: ট্রেসিং দ্য ভুট্টো মিলিয়নস¬—অ্যা স্পেশাল রিপোর্ট; ভুট্টো ক্ল্যান লিভস ট্রেইল অব কোরাপশন’ প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। এর তিনটি অনুচ্ছেদ প্রীতা তাঁর প্রতিবেদনে হবহু কপি করলেও সূত্র উল্লেখ করেননি। হয়তো এসব কারণেও ‘ব্লিটজ’-এর প্রতিবেদনগুলো নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

সন্দেহের ঘেরাটোপে হিনা-বিলাওয়ালের প্রেম - প্রথম আলো

No comments:

Post a Comment