
রাজ স্যামন
যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার নদীগুলো থেকে রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যাচ্ছে কিং স্যামন বা রাজ স্যামন। এটি স্যামন মাছের সবচেয়ে বড় প্রজাতি। আলাস্কার ‘ক্রুকড ক্রিক’ এলাকার কাসকোকিয়িম নদীতে একসময় এই স্যামন প্রচুর ছিল। এখন তা খুব কম। এই মাছের সংখ্যা ব্যাপক কমে যাওয়ার বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। অথচ ওই এলাকার মানুষের খাবারের তালিকায় অন্যতম প্রধান খাবার এই সুস্বাদু মাছ।
কাজেই হঠাত্ করে রাজ স্যামনের অপ্রতুলতা একদিকে যেমন তাদের খাবারের চাহিদায় ঘাটতি ফেলেছে, একই সঙ্গে সেখানকার মানুষের জীবিকা ও অর্থনৈতিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাদের সবার মনে এখন একই প্রশ্ন—রাজ স্যামন নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কেন? সম্প্রতি বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে রাজ স্যামনের হারিয়ে যেতে থাকা ও এর নেতিবাচক প্রভাব উঠে এসেছে।
আলাস্কায় স্যামন সবচেয়ে পরিচিত মাছ। স্থানীয় ভাষায় এটি চিনুক স্যামন। একেকটি রাজ স্যামন তিন ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। ওজনে হতে পারে ৫০ কেজির বেশি। শীত বা নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার স্যামন মাছ সমুদ্রের স্রোতের মুখে থাকে। স্বচ্ছ পানির মধ্যে ছোট পাথর বা নুড়ি সরিয়ে এরা ছোট ছোট গর্ত করে থাকে। এরপর গ্রীষ্মে ডিম পাড়ার সময় নদীর মিঠা পানিতে ঝাঁক বেঁধে আসে স্যামন মাছ। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, আইসল্যান্ড ও কানাডার সমুদ্র উপকূলে এবং সেখানকার নদ-নদীতে স্যামন মাছের বিচরণ।
অনেকের দাবি, সবচেয়ে উত্কৃষ্ট মানের রাজ স্যামন মাছ পাওয়া যায় আলাস্কার নদীতে। ডিম পাড়ার সময় স্যামন মাছ ঝাঁক বেঁধে সাগর থেকে নদীর মোহনায় চলে আসে। স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে অপেক্ষাকৃত অল্প পানিতে ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে পোনা বের হওয়ার পর তা বড় না হওয়া পর্যন্ত নদীতেই থাকে স্যামন। পোনা একটু বড় হলে আবার দল বেঁধে সাগরে ফিরে যায় মাছগুলো। স্যামন মাছ যখন সমুদ্রে থাকে, তখন এদের রং উজ্জ্বল রুপালি। রাজ স্যামনের গায়ের রং ঝিলিক দেওয়া রুপালি বা লাল হয়। ক্রুকড ক্রিকের জেলেরা এ মাছ ধরতে কাসকোকিয়িম নদীতে জাল পাতেন। মাছ ধরা পড়লে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি বানিয়ে শীত মৌসুমের জন্য সংরক্ষণ করেন। শীতের মৌসুমে মাছটি রান্না করে বা ভেজে খায় তারা।
আলাস্কার বরফ ছাওয়া ক্রুকড ক্রিকের জনসংখ্যা ২০০ জনেরও কম। এখানে কেনাকাটা করার মতো বড় কোনো দোকান নেই। এমনকি শহরে যাওয়ার মতো ভালো রাস্তাঘাটও নেই। তাই সেখানকার মানুষ মূলত স্যামন মাছের ওপর নির্ভর করে জীবন ধারণ করে। এ মাছকে তারা মনে করে সৌভাগ্যের প্রতীক। কিন্তু হঠাত্ করেই তাদের সুদিন চলে যাওয়ায় তারা চিন্তিত। ক্রুকড ক্রিকের বাসিন্দা এভলিন টমাস জানিয়েছেন, ‘নদীতে হঠাত্ করেই রাজ স্যামন একেবারেই কমে গেছে। এ মাছটিকে আমরা “খাদ্য” বলি। এ মাছ না পেলে অন্য খাবার কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্য নেই আমাদের। এই মাছ না পেলে অনাহারে থাকতে হবে আমাদের।’
এ বছরের গ্রীষ্মে আলাস্কা অঞ্চলে সবচেয়ে কম রাজ স্যামন ধরা পড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মাছের ব্যবসা ও পর্যটনের ক্ষেত্রেও। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছে ক্রুকড ক্রিকের মত কিং স্যামননির্ভর এলাকার বাসিন্দারা। যুক্তরাষ্ট্রের মত্স্য বিভাগের পক্ষ থেকে রাজ স্যামন রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে এই মাছ ধরার ওপর কড়াকড়ি আরোপ হয়েছে। ক্রুকড ক্রিকের বাসিন্দারা এ বিষয়টি নিয়েও চিন্তিত। টমাস বলেন, ‘মাছ না ধরলে আমাদের চলবে কি করে?’
ক্রুকড ক্রিকের বাসিন্দাদের জীবনধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ বেশির ভাগ বাইরে থেকে বিমান বা জাহাজে করে নিয়ে আসতে হয়। এসব ক্ষেত্রে অর্থের জোগান দেয় রাজ স্যামন। একটি স্যামন দিয়ে একটি পরিবারের সপ্তাহখানেক চলে যায়।
আলাস্কার নদীতে রাজ স্যামন আবার আগের মতো ফিরে আসবে কি না—এ বিষয়ে আশার কথা শোনাতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা। স্যামনের রহস্যময় অন্তর্ধান প্রসঙ্গে আলাস্কার ফিস অ্যান্ড গেম বিভাগের জীববিজ্ঞানী প্যাট শিল্ডস বলেন, ‘আলাস্কার নদী থেকে রাজ স্যামন হারিয়ে যাওয়ার কারণ এখনো অজানা। এখন বিষয়টি সবার নজরে এসেছে। মাছ রক্ষায় অনেক চেষ্টা করা হলেও বড় মাছ নদীতে আর আসছে না। নদীতে কেন আসছে না—এ রহস্য উদঘাটনে সমুদ্রের পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।’
মাছের রহস্যময় অন্তর্ধান প্রসঙ্গে গবেষকদের ভাষ্য, প্যাসিফিক ডেকাডাল অসিলেশন (পিডিও) নামে সমুদ্রের তাপমাত্রা পরিবর্তনের একটি চক্র আলাস্কার নদীগুলো থেকে রাজ স্যামনের হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। এ চক্র ৩০ বছর ধরে চলতে থাকে। তাই আগামী ৩০ বছরে হয়তো ক্রুকড ক্রিকের বাসিন্দাদের রাজ স্যামনের আশা ছেড়ে দিতে হতে পারে।
গবেষকের মতে, পিডিওর কারণে আলাস্কার সমুদ্র অঞ্চলে স্যামন মাছের খাবারের সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে আরেক দল গবেষকের মতে, পরিবেশদূষণ ও মানবসৃষ্ট কারণে পানিতে এসিডের মাত্রা বেড়ে গেছে বলে হারিয়ে যাচ্ছে রাজ স্যামন মাছ।
কাজেই হঠাত্ করে রাজ স্যামনের অপ্রতুলতা একদিকে যেমন তাদের খাবারের চাহিদায় ঘাটতি ফেলেছে, একই সঙ্গে সেখানকার মানুষের জীবিকা ও অর্থনৈতিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাদের সবার মনে এখন একই প্রশ্ন—রাজ স্যামন নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কেন? সম্প্রতি বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে রাজ স্যামনের হারিয়ে যেতে থাকা ও এর নেতিবাচক প্রভাব উঠে এসেছে।
আলাস্কায় স্যামন সবচেয়ে পরিচিত মাছ। স্থানীয় ভাষায় এটি চিনুক স্যামন। একেকটি রাজ স্যামন তিন ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। ওজনে হতে পারে ৫০ কেজির বেশি। শীত বা নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার স্যামন মাছ সমুদ্রের স্রোতের মুখে থাকে। স্বচ্ছ পানির মধ্যে ছোট পাথর বা নুড়ি সরিয়ে এরা ছোট ছোট গর্ত করে থাকে। এরপর গ্রীষ্মে ডিম পাড়ার সময় নদীর মিঠা পানিতে ঝাঁক বেঁধে আসে স্যামন মাছ। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, আইসল্যান্ড ও কানাডার সমুদ্র উপকূলে এবং সেখানকার নদ-নদীতে স্যামন মাছের বিচরণ।
অনেকের দাবি, সবচেয়ে উত্কৃষ্ট মানের রাজ স্যামন মাছ পাওয়া যায় আলাস্কার নদীতে। ডিম পাড়ার সময় স্যামন মাছ ঝাঁক বেঁধে সাগর থেকে নদীর মোহনায় চলে আসে। স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে অপেক্ষাকৃত অল্প পানিতে ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে পোনা বের হওয়ার পর তা বড় না হওয়া পর্যন্ত নদীতেই থাকে স্যামন। পোনা একটু বড় হলে আবার দল বেঁধে সাগরে ফিরে যায় মাছগুলো। স্যামন মাছ যখন সমুদ্রে থাকে, তখন এদের রং উজ্জ্বল রুপালি। রাজ স্যামনের গায়ের রং ঝিলিক দেওয়া রুপালি বা লাল হয়। ক্রুকড ক্রিকের জেলেরা এ মাছ ধরতে কাসকোকিয়িম নদীতে জাল পাতেন। মাছ ধরা পড়লে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি বানিয়ে শীত মৌসুমের জন্য সংরক্ষণ করেন। শীতের মৌসুমে মাছটি রান্না করে বা ভেজে খায় তারা।
আলাস্কার বরফ ছাওয়া ক্রুকড ক্রিকের জনসংখ্যা ২০০ জনেরও কম। এখানে কেনাকাটা করার মতো বড় কোনো দোকান নেই। এমনকি শহরে যাওয়ার মতো ভালো রাস্তাঘাটও নেই। তাই সেখানকার মানুষ মূলত স্যামন মাছের ওপর নির্ভর করে জীবন ধারণ করে। এ মাছকে তারা মনে করে সৌভাগ্যের প্রতীক। কিন্তু হঠাত্ করেই তাদের সুদিন চলে যাওয়ায় তারা চিন্তিত। ক্রুকড ক্রিকের বাসিন্দা এভলিন টমাস জানিয়েছেন, ‘নদীতে হঠাত্ করেই রাজ স্যামন একেবারেই কমে গেছে। এ মাছটিকে আমরা “খাদ্য” বলি। এ মাছ না পেলে অন্য খাবার কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্য নেই আমাদের। এই মাছ না পেলে অনাহারে থাকতে হবে আমাদের।’
এ বছরের গ্রীষ্মে আলাস্কা অঞ্চলে সবচেয়ে কম রাজ স্যামন ধরা পড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মাছের ব্যবসা ও পর্যটনের ক্ষেত্রেও। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছে ক্রুকড ক্রিকের মত কিং স্যামননির্ভর এলাকার বাসিন্দারা। যুক্তরাষ্ট্রের মত্স্য বিভাগের পক্ষ থেকে রাজ স্যামন রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে এই মাছ ধরার ওপর কড়াকড়ি আরোপ হয়েছে। ক্রুকড ক্রিকের বাসিন্দারা এ বিষয়টি নিয়েও চিন্তিত। টমাস বলেন, ‘মাছ না ধরলে আমাদের চলবে কি করে?’
ক্রুকড ক্রিকের বাসিন্দাদের জীবনধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ বেশির ভাগ বাইরে থেকে বিমান বা জাহাজে করে নিয়ে আসতে হয়। এসব ক্ষেত্রে অর্থের জোগান দেয় রাজ স্যামন। একটি স্যামন দিয়ে একটি পরিবারের সপ্তাহখানেক চলে যায়।
আলাস্কার নদীতে রাজ স্যামন আবার আগের মতো ফিরে আসবে কি না—এ বিষয়ে আশার কথা শোনাতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা। স্যামনের রহস্যময় অন্তর্ধান প্রসঙ্গে আলাস্কার ফিস অ্যান্ড গেম বিভাগের জীববিজ্ঞানী প্যাট শিল্ডস বলেন, ‘আলাস্কার নদী থেকে রাজ স্যামন হারিয়ে যাওয়ার কারণ এখনো অজানা। এখন বিষয়টি সবার নজরে এসেছে। মাছ রক্ষায় অনেক চেষ্টা করা হলেও বড় মাছ নদীতে আর আসছে না। নদীতে কেন আসছে না—এ রহস্য উদঘাটনে সমুদ্রের পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।’
মাছের রহস্যময় অন্তর্ধান প্রসঙ্গে গবেষকদের ভাষ্য, প্যাসিফিক ডেকাডাল অসিলেশন (পিডিও) নামে সমুদ্রের তাপমাত্রা পরিবর্তনের একটি চক্র আলাস্কার নদীগুলো থেকে রাজ স্যামনের হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। এ চক্র ৩০ বছর ধরে চলতে থাকে। তাই আগামী ৩০ বছরে হয়তো ক্রুকড ক্রিকের বাসিন্দাদের রাজ স্যামনের আশা ছেড়ে দিতে হতে পারে।
গবেষকের মতে, পিডিওর কারণে আলাস্কার সমুদ্র অঞ্চলে স্যামন মাছের খাবারের সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে আরেক দল গবেষকের মতে, পরিবেশদূষণ ও মানবসৃষ্ট কারণে পানিতে এসিডের মাত্রা বেড়ে গেছে বলে হারিয়ে যাচ্ছে রাজ স্যামন মাছ।
রাজ স্যামনের হারিয়ে যাওয়ার রহস্য - প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment