TECH GURU, TECH-SCIENCE NEWS

"I celebrate myself, and sing myself,
and what I assume you shall assume,
for every atom belonging to me as good belongs to you."

Monday, October 1, 2012

বায়োলজিক্যাল ইন্টারনেট ‘বাই-ফাই’!



এক কোষ থেকে আরেক কোষে কোনোরূপ সংযোগ ছাড়াই জেনেটিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার একটি জৈব প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এ পদ্ধতিটিকে গবেষকরা বলছেন বিশ্বের প্রথম ‘বায়োলজিক্যাল ইন্টারনেট’ বা ‘বাই-ফাই’। এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।
গবেষকরা জৈব ইন্টারনেট বা বাই-ফাই তৈরিতে ‘এম১৩ ব্যাকটেরিওফাজ’ নামের এক ধরনের ভাইরাস ব্যবহার করেছেন। 
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মনিকা অরটিজ ও ড্রু অ্যান্ডি এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, এম১৩ ভাইরাসটি কোনো কোষের ডিএনএ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অন্য আরেকটি কোষে পৌঁছে দিতে পারে।
বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে গবেষকরা জানিয়েছেন, বাই-ফাই পদ্ধতিতে কোষের মধ্যে তথ্য স্থানান্তরের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বাই-ফাই পদ্ধতিটি বায়োসিনথেটিক কারখানা তৈরি করতে পারে যাতে প্রচুর পরিমাণ এম১৩ ভাইরাস ব্যবহার করে জৈব জ্বালানি, ওষুধ, রাসায়নিক উপাদানসহ টিস্যু বা দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তৈরিতে কাজে লাগানো যেতে পারে।
গবেষক অরটিজ জানিয়েছেন, এম ১৩ ভাইরাসটির সাহায্যে তৈরি বাই-ফাই পদ্ধতিতে সাত সেন্টিমিটার দূরের কোষেও জিনগত তথ্য পৌঁছে দেয়া সম্ভব। তাঁর মতে, এটা বড় একটা দূরত্ব। 
এ ভাইরাসটির কার্যপ্রণালী সম্পর্কে গবেষকরা জানিয়েছেন, কোনো জিনের তথ্য সংগ্রহ করে এর আশ্রয়দাতা কোষে এম ১৩ ভাইরাসটির রিপ্রোডাকশান বা পুনরুত্পাদন ঘটে। ভাইরাসটির ডিএনএ থেকে তন্তু আলাদা করে এর পুনরুত্পাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। গবেষকরা জানিয়েছেন, এম১৩ থেকে আলাদা করা ডিএনএ তন্তু যখন নতুন কোনো কোষের সংস্পর্শে আসে, সেক্ষেত্রে তারা আগের সংগৃহীত ‘ডিএনএ প্যাকেজ’ বা ডিএনএ তথ্য উন্মুক্ত করতে পারে। 
জীববিজ্ঞানী অরটিজ আরও জানিয়েছেন, কোষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জৈবিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ প্রক্রিয়ায় সাধারণত এক কোষ থেকে আরেক কোষে বার্তা আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াটি পৃথক করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের বার্তা আদান প্রদানের ঘটনা খুবই সীমিত আকারে ঘটে। তবে এম১৩ ভাইরাসটি তারবিহীন যোগাযোগ মাধ্যমের মত আরও জটিলতর প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত তথ্য আদান প্রদান করতে সক্ষম হবে। 
এদিকে, বাই-ফাই পদ্ধতি ছাড়াও এম১৩ ভাইরাস থেকে মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার মতো বিদ্যুত্ উত্পাদনের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। 
এ প্রসঙ্গে গবেষকেরা জানিয়েছেন, এম১৩ ভাইরাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এরা ব্যাকটেরিয়া খায় এবং পিজোইলেকট্রিক তৈরি করে যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুত্ শক্তিতে রূপান্তর করতে পারে।
গবেষকেরা আশা করছেন, ভাইরাস ব্যবহার করে পিজোইলেকট্রিক তৈরি করা সম্ভব হলে হাঁটার সময় যে শক্তি ব্যয় হয়, তা কাজে লাগিয়ে মোবাইল ফোন চার্জ করা যাবে এবং বর্তমানে মোবাইল ফোনে ব্যবহূত বিষাক্ত পিজোইলেকট্রিক উপাদানের বিকল্প হিসেবে তা ব্যবহার করা যাবে।
গবেষক সিউং-উক লি এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘মোবাইল ফোনে ব্যবহূত প্রতিটি মাইক্রোফোনই পিজোইলেকট্রিক। মাইক্রোফোন পিজোইলেকট্রিক হওয়ার কারণেই শক্তিকে শব্দ তরঙ্গে রূপান্তর করতে পারে এবং ওই তরঙ্গ আমরা মোবাইল ফোনে শুনতে পাই।’
সিউং-উক লি আরও জানিয়েছেন, পিজোইলেকট্রিকের যন্ত্রাংশ তৈরিতে সিসা, ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ও বিষাক্ত ধাতু ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এম১৩ ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাসকে সংকুচিত করা হলে পিজোইলেকট্রিকের মতো বিদ্যুত্ তৈরি সম্ভব হবে। এতে সিসা ও ক্যাডমিয়ামের মতো বিষাক্ত পদার্থের ব্যবহার বন্ধ হবে। জানা গেছে, পেনসিল আকৃতির এম১৩ ভাইরাসটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। সাশ্রয়ী এ ভাইরাস উত্পাদন প্রক্রিয়াটিও সহজ।


বায়োলজিক্যাল ইন্টারনেট ‘বাই-ফাই’! - প্রথম আলো

No comments:

Post a Comment