TECH GURU, TECH-SCIENCE NEWS

"I celebrate myself, and sing myself,
and what I assume you shall assume,
for every atom belonging to me as good belongs to you."

Monday, October 8, 2012

নোটে চলে জীবাণুর লেনদেন



টাকা কত হাত ঘোরে। কত কিছু লেগে থাকে। নোটে নোটে হয় লাখ লাখ জীবাণু লেনদেন। সেসব জীবাণু থেকে ভয়ংকর সব রোগ-ব্যাধি মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ সোমবার ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
খবরে বলা হয়, সম্প্রতি ভারতের তিন বিজ্ঞানী ই কে ইলুমালাই, আর্নেস্ট ডেভিড ও জে হেমচন্দ্রন টাকায় লেগে থাকা জীবাণুর ভয়াবহতা অনুসন্ধান করেছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে তামিলনাড়ুর ভেল্লোরে বাসের কয়েকজন কন্ডাক্টর, মাছ ও সবজি বিক্রেতার কাছ থেকে পাঁচ ও ১০ টাকার বেশ কিছু নোট সংগ্রহ করেন তাঁরা। সেগুলো বায়ুনিরোধক পরিষ্কার কৌটায় রাখা হয়। এরপর গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা যায়, বারবার হাতবদলের ফাঁকে নোটগুলোতে হরেক রকমের জীবাণু বাসা বেঁধেছে। তার মধ্যে ছিল সংক্রামক কয়েকটি রোগের ব্যাকটেরিয়া, যেগুলো থেকে ত্বকে সংক্রমণ হতে পারে। নানা অসুখ ছড়াতে পারে শ্বাসযন্ত্র ও পাকযন্ত্রে। খাদ্যে বিষক্রিয়াও হতে পারে। এমনকি মেনিনজাইটিস, সেপটিসেমিয়ার মতো জটিল রোগও হতে পারে।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিন’ পত্রিকার অক্টোবর মাসের সংস্করণে এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হবে।
গবেষক দলটির অন্যতম সদস্য ভেল্লোরের থিরুভাল্লুভার বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আর্নেস্ট ডেভিড জানিয়েছেন, টাকায় যে বিভিন্ন রোগজীবাণু থাকে, সে ব্যাপারে সবাই সচেতন নন। নোট গোনার সময় অনেকেই জিভের লালায় আঙুল ভিজিয়ে নেন। রাস্তাঘাটে খাবার কিনে খাওয়ার ক্ষেত্রেও একই বিপদ। হাতে কোনো ক্ষত থাকলে তা দিয়েও নোটের জীবাণু শরীরে ঢুকে পড়তে পারে।
আর্নেস্ট ডেভিড বলেন, দোকান-বাজার থেকে পাঁচতারা হোটেল—সর্বত্রই টাকার অবাধ বিচরণ। সময়ে-সময়ে অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছায় সেগুলো। এতে সহজেই একজনের থেকে অন্য জনের শরীরে রোগজীবাণু ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তবে গবেষকেরা এটাও জানিয়েছেন, পরিচ্ছন্নতার সহজ কিছু নিয়ম মানলেই নোটে থাকা জীবাণুর আক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে স্মার্ট কার্ডে লেনদেন করলেও এই বিপদ খানিকটা কমে আসে।
কলকাতার একটি হাসপাতালের এক ভাইরাস-বিশেষজ্ঞ বলেন, টাকা কিছুটা পুরোনো হলে ধুলো জমে সেগুলো কালচে হয়ে যেতে থাকে। প্রচুর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস নোটগুলোর ওপর লেগে থাকে। আর্দ্র আবহাওয়ায় টাকার নোটে কিছুটা জলীয়বাষ্প জমে থাকে। তা ওই জীবাণুগুলোকে নোটের ওপর টিকে থাকতে সাহায্য করে। অপরিচ্ছন্ন ঘিঞ্জি এলাকায় বাজারের নোটে ব্যাকটেরিয়া বেশি থাকে। সর্দি-কাশি থাকলে ওই ব্যক্তির কাছে থাকা নোটে তার রোগের জীবাণুর হদিস মিলতে পারে। ফলে নোটের মাধ্যমে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা অমূলক নয়।
গবেষক দলের সদস্য ডেভিড জানিয়েছেন, নমুনা হিসেবে যে নোটগুলো নেওয়া হয়েছিল, তার সব কটিতেই রোগজীবাণু মিলেছে। পুরোনোগুলো তো বটেই, নতুন নোটেও কমপক্ষে আট রকমের ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: এসচেরিচিয়া কোলাই, প্রোটিয়াস মিরাবিলিস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস ও সালমোনেল্লা, ব্যাসিলাস, সিউডোমোনাস, ভিব্রিও প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া। 
চিকিত্সক অভিজিত্ জানিয়েছেন, বিশেষ ক্ষেত্রে ওই সব ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে ত্বক, খাদ্যনালি, শ্বাসনালি, রেচননালির বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম।
টাকা জীবাণুমুক্ত করার কয়েকটি উপায়ও বলেছেন গবেষকেরা। তাঁরা বলেছেন, ব্যাংকে নোট পৌঁছালে অতিবেগুনি রশ্মি দিয়ে বা কোনো রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সেগুলো জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া সম্ভব। 
গবেষক আর্নেস্ট ডেভিড বলেন, কিছুটা সতর্ক হলেই ওই সংক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। টাকা লেনদেন ও রাস্তাঘাটে খাওয়ার সময় এ কথা মনে রাখাটা খুব জরুরি।


নোটে চলে জীবাণুর লেনদেন - প্রথম আলো

No comments:

Post a Comment