TECH GURU, TECH-SCIENCE NEWS

"I celebrate myself, and sing myself,
and what I assume you shall assume,
for every atom belonging to me as good belongs to you."

Monday, August 20, 2012

বড়র ভয়...



তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ শীর্ষে উঠে আসায় যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ কয়েকটি দেশের তা সবিশেষ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশগুলোর এ চিন্তার কারণ, চীন হয়তো নিজের দেশের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে গোপনে নজরদারি বাড়াচ্ছে। আর এ ভয়েরই শিকার হচ্ছে চীনের হুয়াউয়ে টেকনোলজিসহ টেলিকম প্রযুক্তির অন্য চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। হুয়াউয়ের ওপর নজরদারি বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে। হুয়াউয়েকে নিয়ে ভর করা এ ভয় নিয়ে সম্প্রতি ইকনমিস্টের সাময়িকীতে চলতি মাসে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ইকনমিস্টের প্রতিবেদনটি অনুসারে, চীনের হুয়াউয়ে টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড সুইডেনের এরিকসনকে পেছনে ফেলে টেলিকমপণ্যের বাজারের শীর্ষস্থানে চলে এসেছে। শুধু হুয়াউয়ে নয়, চীনের কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লেনোভো চলতি বছরের শেষ নাগাদ কম্পিউটার বিক্রির হিসাবে হিউলেট প্যাকার্ডকে (এইচপি) হটিয়ে বিশ্বের ১ নম্বর প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। লেনোভোর এই রেকর্ড ছুঁতে পারাটা চীনা কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রথমবারের মতো শীর্ষে উঠে আসার ঘটনা হবে।
এ বছরের জুলাই মাসে তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গার্টনার ও আইডিসির প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা জানিয়েছিলেন, লেনোভো ও হুয়াউয়ে চলতি বছরেই কম্পিউটার ও টেলিযোগাযোগ-পণ্যের ক্ষেত্রে বাজারে শীর্ষস্থান দখল করবে।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর—এ তিন মাসে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কম্পিউটার বিক্রি করেছিল লেনোভো। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন মাসে বাজারে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ দখল করেছিল প্রতিষ্ঠানটি, যা এইচপির চেয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কম। এ বছরের শেষ নাগাদ এইচপিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে টেলিকম প্রযুক্তির শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হুয়াউয়েকে শীর্ষে উঠে আসতে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। ১৯৮৭ সালে চীনা সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নেওয়া প্রকৌশলী রেন জেনফেই হুয়াউয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রথম দিকে চীনের বাজারেও হুয়াউকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। ১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মতো বাইরের দেশে নেটওয়ার্ক বাড়ানোর সুযোগ পায় হুয়াউয়ে। বর্তমানে ১৪০টি দেশে এক লাখ ৪০ হাজার কর্মী নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ইউরোপের কয়েকটি দেশে চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক অবকাঠামো তৈরির জন্য চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হুয়াউয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, এই প্রতিষ্ঠান চীনা সরকার ও চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মিকে বিভিন্ন দেশের ওপর গোপনে নজরদারির সুযোগ করে দিচ্ছে। আর এই অভিযোগ বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে হুয়াউয়ের সামনে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।
হুয়াউয়ে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলা চালানো হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগ। চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তথ্য পেতে হুয়াউয়েকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে নজরদারি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি সাইবার যুদ্ধ হলে চীনারা হুয়াউয়ে নেটওয়ার্ক তাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে—এমন ধারণা করে বিভিন্ন দেশে হুয়াউয়ের ওপর কড়া নজরদারি করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অস্ট্রেলিয়াতেও হুয়াউয়ের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে এবং নেটওয়ার্ক বাড়ানোর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। হুয়াউয়ে বাধার মুখে পড়েছে ভারতেও। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নেটওয়ার্কে চীনা হ্যাকারদের সাইবার হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা হুয়াউয়ের সংশ্লিষ্টতা খুঁজছে। ইউরোপিয়ান কমিশন তদন্ত শুরু করেছে বিষয়টি নিয়ে।
পশ্চিমা দেশগুলোয় হুয়াউয়ের নেটওয়ার্ক বিস্তৃতিতে চীনা সরকারের স্পষ্ট মদদ বা হাত রয়েছে বলে প্রচলিত ধারণা থেকেই মূলত হুয়াউয়ে নিয়ে এ ভয়ের সৃষ্টি। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের ধারণা, হুয়াউয়ে নেটওয়ার্ক বাড়ালে চীন সরকার বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর গোপনে নজরদারি করতে পারবে। হুয়াউয়ের বিষয়ে ভীত হয়েই প্রতিষ্ঠানটিকে আন্তর্জাতিক টেলিকম অবকাঠামো ক্ষেত্রে নিলামে অংশ নিতে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।
হুয়াউয়ের দাবি, টেলিকম প্রযুক্তি তৈরির ক্ষেত্রে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। কারণ, কোনো দেশে একবার গোপনে নজরদারির এমন তথ্য ধরা পড়লে হুয়াউয়ের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। হুয়াউয়েকে বাধা দিলে সংশ্লিষ্ট দেশটির অর্থনৈতিক বিকাশে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। হুয়াউয়ের সাশ্রয়ী কিন্তু কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হবে দেশটি। যেহেতু টেলিযোগাযোগের পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে চীন শীর্ষে, তাই টেলিযোগাযোগের যন্ত্রাংশের সরবরাহ নিশ্চিত হবে। চীনের নকশা ও উত্পাদন ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সারা বিশ্বের টেলিকম প্রযুক্তিপণ্যের সরবরাহ করছে। হুয়াউয়ে বা এর চীনা প্রতিদ্বন্দ্বী ‘জেটিই’ বাদ দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান বেছে নিলেও নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হবে না। কারণ, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেই এখন চীনের টেলিকম যন্ত্রাংশের সরবরাহের ওপরই নির্ভর করতে হয়।
হুয়াউয়ের পরামর্শ হচ্ছে, নজরদারি করতে হলে শুধু হুয়াউয়ের ওপরেই নয়, টেলিকম প্রযুক্তির সব প্রতিষ্ঠানের ওপর সমানভাবে করা উচিত। সরকারের উচিত সে দেশের ব্যবসা পেতে হলে কী শর্ত মানতে হবে, সে বিষয়ে পরিষ্কারভাবে আগে ভাগে একটি নীতিমালা তৈরি করে তা জানিয়ে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের তেমন কোনো নীতিমালা নেই। তাই তাদের উচিত, কোন দেশ যন্ত্র তৈরি করছে, সেটা নিয়ে না ভেবে কোন যন্ত্রাংশ নিরাপদ হবে, সেটা নির্ধারণ করে দেওয়া।
হুয়াউয়ে কর্তৃপক্ষের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাপ্লাই চেন পরীক্ষার কোনো কার্যকর পদ্ধতি নেই। যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ টেলিকমের জন্য জিসিএইচকিউ (ব্রিটেনের সিগন্যালস-ইনটেলিজেন্স এজেন্সি) সঙ্গে যুক্ত হয়ে হুয়াউয়ে একটি ইউনিট তৈরি করেছে, যা নিরাপত্তা পরীক্ষায় কাজ করে। এ ধরনের পদ্ধতি নিতে পারে ভীত দেশগুলো। 
প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, হুয়াউকে নিয়ে সৃষ্ট ভীতি দূর করতে এর কর্তৃপক্ষের বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার বিষয়টি অস্বচ্ছ ও গোপন ব্যবসা নীতি অনেক দেশের সরকারের মনেই গোপনে নজরদারি ও সাইবার হামলার ভয় ধরিয়েছে। এ ভয় দূর করতে পুরো বিষয়টি খোলাসা করে প্রতিষ্ঠানটির তথ্য আরও উন্মুক্ত করা উচিত। ভবিষ্যতে হুয়াউয়েকে টিকে থাকতে হলে নিজে স্বচ্ছ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

No comments:

Post a Comment