TECH GURU, TECH-SCIENCE NEWS

"I celebrate myself, and sing myself,
and what I assume you shall assume,
for every atom belonging to me as good belongs to you."

Monday, August 20, 2012

প্ল্যানেট অব ‘অ্যাপস’!



মানুষের জীবনে মুঠোফোন এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুঠোফোন এখন আর কেবল কথা বলার যন্ত্র হিসেবেই নয়, ইন্টারনেট আর স্মার্টফোনের এই যুগে মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপসের ব্যবহার। এখন মানুষের প্রয়োজনীয় সবকিছুর জন্যই তৈরি হচ্ছে অ্যাপ। জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য মানুষের হাতের মুঠোয় এখন অ্যাপসের ব্যবহার। অ্যাপসের ব্যবহার নিয়ে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মানুষের ঘুমের ধরন বিশ্লেষণ করা থেকে শুরু করে তার জেগে ওঠা, দৈনন্দিন কাজ আর বিশ্রাম-বিনোদনের—সবকিছুতেই এখন অ্যাপসের ছড়াছড়ি।
সুখের নিদ্রা শেষে ঠিক সময়ে জাগতে হবে। এখন আর মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙার জন্য অপেক্ষা নয়। ঘুমের ধরন বিশ্লেষণ করে ঠিক সময়ে ডেকে দিতে স্মার্টফোনের অ্যাপ্লিকেশনের ওপর নির্ভর করছেন অনেকেই। রাস্তায় ভিড়? কিন্তু বাইরে যেতেই হবে। কোন পথে ভিড় কম, সেটা জানতে মুঠোফোন বা ট্যাবলেট কম্পিউটারে অ্যাপ্লিকেশন চালু করলেই হলো। জ্যামে আটকে গেছে গাড়ি? বিনোদনের জন্য স্মার্টফোনের অ্যাপ্লিকেশন ছুঁয়ে দিলেই হলো। বীজগণিতের জটিল সূত্র মনে রাখতে শিক্ষার্থীদের এখন আর দেয়ালে সূত্রের কাগজ আটকে রাখতে হয় না। শরীরের খোঁজ-খবর থেকে শুরু করে সব পেশা ও মানুষের প্রয়োজনে সবকিছুতেই এখন অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপসের ব্যবহার বেড়ে গেছে।
স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের যখনই কোনো প্রয়োজন পড়ছে, তখনই স্মার্টফোনের অ্যাপ চালু করছেন তাঁরা। শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ হয়ে পড়ছে অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার। অ্যাপস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে তরুণদের মধ্যে।
পড়ালেখার কাজেও বাড়ছে অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার। স্কুলের বিভিন্ন কোর্স নিয়ে অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হচ্ছে এতে। বীজগণিত বা জ্যামিতির মতো কঠিন বিষয়গুলো যেমন সহজে আয়ত্তে আসছে, তেমনি গেম অ্যাপগুলো মানসিক দক্ষতাও বাড়াচ্ছে। শব্দের উচ্চারণ শেখার জন্যও রয়েছে আইওএস অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমনির্ভর পণ্যের জন্য বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন। অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে শিক্ষকেরা সংগীত থেকে শুরু করে ব্যবসা পরিচিতি পর্যন্ত সব বিষয়েই পড়াতে পারছেন। সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর বা হিসাববিষয়ক বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন গণিত বা পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করছে। স্কুলে যাওয়ার বয়সে পৌঁছানোর আগে থেকেই শিশুদের পড়াশোনা করানোর জন্য এখন বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। উচ্চশিক্ষার কোর্সের ক্ষেত্রেও রয়েছে অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার। শিশুদের পরীক্ষার ভার এখন অ্যাপসের ওপরেই নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিচ্ছেন শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। অ্যাপ্লিকেশনে কাজের একটা ফিরিস্তি দিয়ে সন্তানকে তা পালনের নির্দেশ দিতে পারেন অভিভাবক। কাজ শেষে অ্যাপ্লিকেশন তার ফল জানিয়ে দিতে পারে।
ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগাতে, নতুন করে সম্পর্ক তৈরিতে বা দূরের কারও সঙ্গে যদি সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তার জন্যও রয়েছে অ্যাপ্লিকেশন। প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য রয়েছে ‘পেয়ার’ অ্যাপ্লিকেশনটির মতো অনেক অ্যাপ্লিকেশন। এ অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্যে নিজের স্মার্টফোনেই টাইম লাইন তৈরি করে নিজেদের আলাদা ভুবন তৈরি করছেন যুগলেরা। ব্যক্তিগত বার্তা, ছবি বা স্কেচ, নোট শেয়ার করার জন্য রয়েছে অসংখ্য অ্যাপ। অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর বা গুগলের গুগল প্লে নামের অ্যাপ্লিকেশন স্টোরে আয়ুর্বেদিক বা চিকিত্সাবিষয়ক পরামর্শদাতা অ্যাপ্লিকেশনও রয়েছে। যাঁরা স্মার্টফোনে বিনোদন চান বা গিটারের শব্দ চান, গিটার টিউনারের মতো অ্যাপ্লিকেশন তাঁদের কাজে লাগতে পারে। ‘উই মেইল’ অ্যাপ গর্ভাবস্থায় মায়েদের শারীরিক বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য রাখতে ব্যবহূত হয়।
অ্যাপসের একজন ভক্ত বলিউড তারকা ইমরান খান (২৯)। অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবন সহজতর করে তুলেছে অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার।’ অভিনেতা ইমরান খান তাঁর স্মার্টফোনে তিনটি অ্যাপ্লিকেশন সব সময় ব্যবহার করেন। এর একটি হচ্ছে স্লিপ সাইকেলস, অন্য দুটি—ফ্লাইট ট্র্যাক প্রো ও ওয়েজ। তাঁর মতে, অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার হাতের মুঠোয় পৃথিবীকে এনে দিয়েছে।
ভারতের অ্যাপস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টুএরগো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজ সিং ভান্ডাল জানিয়েছেন, আমরা স্মার্ট বলতে হয়তো প্রযুক্তির সবকিছু জানা মানুষকে বুঝি। অ্যাপসের ব্যবহার মানুষকে হয়তো সে রকম স্মার্ট করে না। তবে অ্যাপসের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সেবার সঙ্গে মানুষের পরিচিতি ঘটে। স্মার্টফোনের ব্যবহারকে অনেকটাই সুইস নাইফের মতো ব্যবহার করতে শেখায় অ্যাপস। 
‘কোলাভেরি ডি’র গায়ক হিসেবে পরিচিত ভারতের অভিনেতা ধানুশ (২৮)। নিজে আইপ্যাড, ব্ল্যাকবেরি, গ্যালাক্সি এস-৩ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। এসব ডিভাইসে নিয়মিত অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন তিনি। ধানুশ বলেন, ‘আমি ফুটবল ও ক্রিকেটের ভক্ত। স্কোর জানার জন্য স্কোর অ্যাপ ব্যবহার করি। আমার ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করি সামাজিক যোগাযোগের অ্যাপ আর বন্ধুদের সঙ্গে থাকি হোয়াটসআপ নামের অ্যাপে। আমি স্মার্টফোনে গেম খেলি। অ্যাপ্লিকেশন এখন আমার ও আমার পরিবারের অংশ হয়ে গেছে।’
চলতি বছরের জুন মাসের হিসাব অনুসারে, অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। গুগল প্লেতে রয়েছে ছয় লাখেরও বেশি অ্যাপ্লিকেশন। ব্ল্যাকবেরি ও উইন্ডোজেরও নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। এ বছর অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড ৩০ বিলিয়নের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। গুগল প্লেতে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন অ্যাপস ডাউনলোড সংখ্যা।
অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে ব্যবসাও বেড়েছে। এবিআই রিসার্চের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী ২০১১ সালে মোবাইল অ্যাপ থেকে আয় ছিল সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার, ২০১৫ সাল নাগাদ তা ৪৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করার জন্য প্রযুক্তি বিষয়ে গভীর জানাশোনা থাকতে হবে, তা কিন্তু নয়। অ্যাপস জীবনকে সহজ করে তুলতে পারে, দক্ষ করতে পারে। বড় কোনো ফাইল সংরক্ষণে ড্রপবক্সের ব্যবহার, নোট তৈরিতে এভারনোট বা ডকুমেন্ট ব্যবস্থাপনায় জোহোর মতো অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার বেশ সহজ। গুগল প্লে স্টোর থেকে সহজেই অ্যান্ড্রয়েডের জন্য ডাউনলোড করে নেওয়া যায় অ্যাপ্লিকেশন।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, অ্যাপ্লিকেশন এখন মানুষের নিত্যসঙ্গী হিসেবে সর্বত্রই শিক্ষক, বন্ধু পথনির্দেশক ও ব্যক্তিগত সহকারীর ভূমিকা নিয়েছে।

No comments:

Post a Comment