TECH GURU, TECH-SCIENCE NEWS

"I celebrate myself, and sing myself,
and what I assume you shall assume,
for every atom belonging to me as good belongs to you."

Thursday, August 30, 2012

কী আছে চীনের প্রথম সম্রাটের সমাধিতে?



1 2
তথ্য হারিয়ে যাওয়ার ভয় আর বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিকদের হাতে যথেষ্ট প্রযুক্তি না থাকায় চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াংয়ের সমাধির খননকাজের জন্য আরও শতবর্ষ অপেক্ষা করতে হতে পারে। প্রত্নতত্ত্ববিদ ও গবেষকদের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে লাইভ সায়েন্স।
কেউ-ই তাঁকে বিরক্ত করেনি এত দিন। আগামী শত বছরেও হয়তো কেউ করবে না। কারণ, তাঁকে বিরক্ত করলেই হারিয়ে যেতে পারে অনেক অজানা রহস্য। সৈন্যসামন্ত-ঘেরা মাটির নিচের রাজপ্রাসাদে আড়াই হাজার বছর ধরে ঘুমিয়ে আছেন চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং। জীবদ্দশাতেই সম্রাট কিন শি হুয়াং নিজের সমাধিটি মিসরীয়দের সমাধির চেয়ে উন্নততর আর জৌলুশমণ্ডিত করে তৈরি করে নিয়েছিলেন। গবেষকেরা জানান, চীনের সমাধিশহর মাউন্ট লিশানে রয়েছে পরাক্রমশালী চীনের প্রথম সম্রাটের মমি। তবে বর্তমানে গবেষকেরা তাঁর সমাধি খনন করার সাহস জোগাতে পারছেন না। কারণ, তাঁদের আশঙ্কা, বর্তমান প্রত্নতত্ত্ব খননপ্রযুক্তিতে এ সমাধি খনন করা হলে হারিয়ে যেতে পারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যেমনটি ঘটেছিল তুতেন খামেনের সমাধি খননের সময়। 
এক খবরে ফক্স নিউজ জানিয়েছে, নিউইয়র্ক সিটির ডিসকভারি টাইমস স্কয়ারে ২৬ আগস্ট শুরু হয়েছে ‘টেরাকোটা ওয়ারিয়র এক্সিবিশন’ নামের টেরাকোটা সৈন্যের এক বিশেষ প্রদর্শনী। ‘কিন ডাইন্যাস্টি’ বা সম্রাট কিনের শাসনামলের বিভিন্ন অ্যার্টিফ্যাক্ট বা প্রত্নবস্তু এবং নয়টি লাইফসাইজ বা প্রমাণ আকারের টেরাকোটা বা মাটির তৈরি মূর্তিও প্রদর্শিত হচ্ছে। এখানকার কিউরেটর ও টেরাকোটাবিষয়ক প্রত্নতত্ত্ববিদ ক্রিস্টিন রমি জানিয়েছেন, সে সময়কার উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমাধি খোঁড়ার পরও মিসরীয় সম্রাট তুতেন খামেনের সমাধির অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। তাই বর্তমানে যে প্রযুক্তি রয়েছে, তা ব্যবহার করে কিন সম্রাটের সমাধি খনন করলে ভবিষ্যতে হয়তো আফসোস করতে হতে পারে। 

সমাধিতে কী আছে
পাহাড়ের গভীরে বিষাক্ত পারদের পরিখাঘেরা এক সমাধি। এ সমাধি ঘিরে নানা মিথ আর রহস্যের অন্ত নেই। চীনের প্রথম সম্রাটের অনেক রহস্য গোপন করে রেখেছে এ সমাধি। প্রত্নতত্ত্ববিদ ক্রিস্টিন রমি জানান, কৌতূহলীরা ধারণা করেন, এ সমাধি খনন করলেই দুই হাজার বছরের পুরোনো চীনের অনেক ঐতিহাসিক রহস্যের জট উদ্ধার করা সম্ভব হবে, জানা যাবে এক অনন্য ইতিহাস। সম্রাট কিন শি হুয়াংয়ের মূল সমাধি ঘিরে হাজার হাজার টেরাকোটা সৈন্য এবং তাদের ঘোড়াগুলো যেন সমাধি আগলে সতর্ক পাহারা দিচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণী বা পদমর্যাদার এসব টেরাকোটা বা পোড়ামাটির সৈন্য যুদ্ধের সাজে সজ্জিত। 
নিউইয়র্কের টেরাকোটা ওয়ারিয়র এক্সিবিশন-এর কিউরেটর মার্কিন প্রত্নতত্ত্ববিদ রমি চীনের প্রথম সম্রাট প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘কিন শি হুয়াং’-এর উচ্চারণ ‘চীন শু হুয়াং’, যা থেকে আধুনিক ‘চীন’ নামটি এসেছে বলে ধারণা করা হয়। চীনের বিখ্যাত প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোক্তা, পরিমাপকের একক পদ্ধতি প্রচলনকারী, বিশাল চীনকে একক সাম্রাজ্যে রূপ দেয়ার উদ্যোক্তা-পুরুষ পরাক্রমশীল কিন শি হুয়াং খ্রিষ্টপূর্ব ২৫৯ অব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর জন্মের সময় চীন ছয়টি স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল। রাজ্যের রাজারা বংশপরম্পরায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ করে আসছিলেন। এর মধ্যে একটির রাজা ছিলেন কিন শি হুয়াংয়ের বাবা কিন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেছিলেন কিন শি হুয়াং। অল্প বয়সে সিংহাসনে বসলেও অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা আর সময় বুঝে শক্তিশালী এক সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন তিনি। প্রাচীন নথি অনুসারে, সুচতুর পরিকল্পনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিষয়গুলো কাজে লাগিয়ে মাত্র ২৫ বছরের মধ্যেই ছয়টি রাজ্য দখল করে নিয়েছিলেন কিন শি হুয়াং। নিজেকে চীনের প্রথম সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি। এত অল্প বয়সে তিনি কীভাবে এ রাজ্যগুলো জয় করেছেন বা কী পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন, তা নিয়ে এখনো নানা বিতর্ক আছে। ক্রিস্টিন রমি জানিয়েছেন, হয়তো সমাধি খনন করা গেলে সে রহস্যের সমাধান মিলবে। 

অমরত্বের আকাঙ্ক্ষা
মৃত্যুর আগেই নিজেদের সমাধি তৈরি করার রীতি প্রচলন করেছিলেন প্রাচীন মিসরের সম্রাটেরা। চীনের সম্রাট কিন শি হুয়াং সম্ভবত মিসরীয়দের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। নিজের সমাধি তৈরির সময় এমন এক জটিল নকশা তিনি বেছে নেন, যা ছিল অবিশ্বাস্য। তাঁর সমাধি ঘিরে সাজানো হয়েছিল সৈন্যসামন্তের টেরাকোটা, যাকে অদ্ভুত এক জাদুঘরও বলা যেতে পারে। এ ধরনের সমাধি তৈরির পেছনে একটি বিশ্বাস কাজ করেছে। প্রাচীন চীনাদের বিশ্বাস ছিল, মৃত্যুর পর পৃথিবীর যাবতীয় বিষয়ই তার কাজে লাগতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় বা কাজে লাগতে পারে এমন অনেক কিছুই প্রতীকীভাবে সমাধিতে দেওয়া হতো। কিন শি হুয়াংও এটি বিশ্বাস করতেন। তাই তাঁর সমাধির পাশেই তিনি সৈন্যসামন্তের টেরাকোটা তৈরি করিয়ে রেখেছিলেন। 
১৯৭৪ সালে একদল কৃষক শিয়ান এলাকায় কূপ খোঁড়ার সময় প্রথম টেরাকোটা সৈন্যের সন্ধান পান। ‘টেরাকোটা আর্মি’ হিসেবে খ্যাত এ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের স্থানটি এর আগে পর্যন্ত লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল। ১৯৭৪ সালে চীন সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এখানে অনুসন্ধান ও খননকাজ শুরু করে। পরে ১৯৭৯ সালে টেরাকোটা জাদুঘরটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর চার দশক পার হয়ে গেছে। চীনা নৃতাত্ত্বিকেরা এ প্রত্ননিদর্শনস্থল থেকে টেরাকোটা সৈন্যের বহর উদ্ধার করেছেন। তাঁদের অনুমান, এখানে আট হাজারের বেশি টেরাকোটা সৈন্য রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সম্রাট কিন মৃত্যুর পরের জীবনও রাজার হালে যাপনের জন্য সৈন্যদের চেহারা নকল করে তা টেরাকোটায় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। 
সম্রাট কিনের আমলে নির্মিত টেরাকোটা আর্মি জাদুঘর এক অসাধারণ পুরাকীর্তি। বিশ্বের অষ্টম বিস্ময় হিসেবে খ্যাত ‘টেরাকোটা জাদুঘর’কে ইউনেসকো ১৯৮৭ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে। টেরাকোটা নির্মিত যোদ্ধা, চ্যারিয়ট বা রথ ও ঘোড়ার প্রায় আট হাজার মূর্তিসহ মোট ২২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের জাদুঘরটি চারটি খননক্ষেত্র আর একটি প্রদর্শনী ভবন নিয়ে গঠিত।
টেরাকোটা যোদ্ধারা সাতটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কর্মকর্তা, অস্ত্রধারী ও নিরস্ত্র যোদ্ধা, চ্যারিয়ট বা রথে চড়া যোদ্ধা, অশ্বারোহী, হাঁটু গেড়ে বসা তিরন্দাজ ও দাঁড়িয়ে থাকা তিরন্দাজ।
মার্কিন প্রত্নতত্ত্ববিদ রমি আরও জানিয়েছেন, প্রাচীন নথি থেকে জানা যায়, সম্রাট কিন মাটির নিচে বিশাল এক প্রাসাদরাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর সেই প্রাসাদের ছাদ ছিল অসংখ্য রত্নখচিত, যেন তা রাতের আকাশের তারার মতো দেখায়। সম্রাট কিনের রাজপ্রাসাদে ছিল সুন্দরী নারীরাও। তিনি তাঁর সমাধিস্থলে তৈরি করেছিলেন অসংখ্য সুন্দরী নারীর টেরাকোটা মূর্তি। তবে, সুন্দরী নারীদের এ ধরনের টেরাকোটার সন্ধান এখনো পাননি গবেষকেরা। গবেষকেরা আশা করছেন, মূল প্রাসাদের কোথাও রয়েছে এ ধরনের টেরাকোটা নারী। 

খনন-পদ্ধতি
চার দশক ধরে খননকাজ চালিয়েও এখন পর্যন্ত মূল সমাধি স্পর্শ করতে পারেননি নৃতাত্ত্বিকেরা। নথিপত্র অনুসারে, এ সমাধিতে এমন একটি প্রাসাদ আছে, যেখানে রয়েছে কিন শি হুয়াংয়ের মমি। ১০০ বছর যদি এ সমাধিতে পৌঁছাতে লেগে যায়, বলা যায় না তখন কী পাওয়া যাবে! তবে এ ক্ষেত্রে চীনা সরকার তাড়াহুড়া না করে যুক্তিযুক্ত কাজই করছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। ১৯৩০ সালে যখন মিসরীয় সভ্যতার তুতেন খামেনের সমাধি খনন করা হয়েছিল, যথেষ্ট প্রযুক্তিজ্ঞানের অভাবে সে সময় অনেক তথ্য হারিয়ে গেছে। এখন যা জানা গেছে, সেখান থেকে তার চেয়ে আরও অনেক বেশি জানার ছিল। এখন যদি বর্তমানের খনন-পদ্ধতি ব্যবহার করে কিনের সমাধি খোঁড়া হয়, তবে শতবর্ষ পরে সবাই দায়ী করবে বর্তমান প্রত্নতত্ত্ববিদদের। তাঁরা মনে করেন, এ সমাধি কখন খোঁড়া হবে, এ সিদ্ধান্ত নেবে চীন সরকার, তবে সিদ্ধান্তটা প্রযুক্তির উন্নয়নের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে।
প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানিয়েছেন, প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রতিবছর প্রভূত উন্নতি হচ্ছে। যখন সত্তরের দশকে টেরাকোটা সৈন্যের খনন শুরু হয়েছিল, তখন সূর্যের আলো পড়ে এসব মূর্তির অনেক রং নষ্ট হয়ে যায়। এখন এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। যদি খননকাজে ব্যবহূত প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হয় এবং সমাধিক্ষেত্রের ক্ষতি না হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে ১০০ বছরের আগেই হয়তো সমাধিটি পুরোপুরি উন্মুক্ত করা যেতে পারে। অবশ্য সে ক্ষেত্রে রোবট পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সাহায্য নিতে হতে পারে। আর তত দিন অপেক্ষায় থাকতে হবে।

পারদের পরিখা
ইতিহাসের অনেক রহস্য হয়তো লুকিয়ে আছে কিন শি হুয়াংয়ের এ সমাধিতে। কিন্তু বর্তমান সভ্যতার মানুষের কাছে এ রহস্য উন্মোচিত হবে কি? এই প্রশ্নের উত্তর বা সমাধিক্ষেত্র খননের সিদ্ধান্ত শুধু চীন সরকারের ওপরই নির্ভরশীল নয়; এ রহস্য উন্মোচনে প্রয়োজন বিজ্ঞানের আরও উন্নতি সাধন। 
গবেষকেরা ধারণা করছেন, কিন শি হুয়াংয়ের সমাধিতে রয়েছে তরল পারদের একটি ছোট নদী বা পরিখা, যাকে প্রাচীন চীনারা মনে করত অমরত্বের জলাধার। অমরত্বের আকাঙ্ক্ষায় মৃত্যু হয়েছিল চীনের প্রথম সম্রাটের। অমরত্বের আকাঙ্ক্ষায় মাত্র ৩৯ বছর বয়সে নিজ শরীরে পারদের এক ধরনের বড়ি সেবন করেন তিনি।
কিনের সমাধির কাছে পৌঁছাতে হলে এ পারদের জলাশয় বা পরিখা পার হতে হবে প্রত্নতত্ত্ববিদদের। কারণ, সমাধি এলাকার মাটির নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এখানে উচ্চমাত্রার পারদ রয়েছে। বর্তমান প্রযুক্তিতে এ পারদের দুর্গ পার হতে গেলে সমাধির গুরুতর ক্ষতি বা কোনো তথ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। অবশ্য প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বলে থাকেন, ধ্বংসমূলক বিজ্ঞানশিক্ষাই হচ্ছে প্রত্নবিদ্যা। নতুন কিছু জানতে হলে কোনো কিছু নষ্ট করে তবেই তা জানতে হয়। কিন্তু চীনের প্রথম সম্রাটের এ সমাধিরহস্য জানতে চীনারা কি এই অসাধারণ শিল্পকে ধ্বংস করবেন? মনে হয় না। তার চেয়ে বরং তারা আরও কিছুদিন অপেক্ষায় থাকাই শ্রেয়জ্ঞান করবে।




কী আছে চীনের প্রথম সম্রাটের সমাধিতে? (ভিডিও) - প্রথম আলো

No comments:

Post a Comment