TECH GURU, TECH-SCIENCE NEWS

"I celebrate myself, and sing myself,
and what I assume you shall assume,
for every atom belonging to me as good belongs to you."

Sunday, January 6, 2013

টাটার কর্ণধার সাইরাস মিস্ত্রির জানা-অজানা



টাটা সান্সের সাবেক চেয়ারম্যান রতন টাটার (বাঁয়ে) সঙ্গে কথা বলছেন চেয়ারম্যান সাইরাস পাল্লোনজি (ডা��
টাটা সান্সের সাবেক চেয়ারম্যান রতন টাটার (বাঁয়ে) সঙ্গে কথা বলছেন চেয়ারম্যান সাইরাস পাল্লোনজি (ডানে)। ছবি. রয়টার্স
বিশ্বের অন্যতম ও ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক শিল্প গোষ্ঠী টাটার চেয়ারম্যান সাইরাস পাল্লোনজি মিস্ত্রি। গত ২৮ ডিসেম্বর ৪৮ বছর বয়সী সাইরাস মিস্ত্রি এ দায়িত্ব হাতে নেন। 
টাটা সান্সের সাবেক চেয়ারম্যান রতন টাটার উত্তরাধিকারী হিসেবে যখন সাইরাস মিস্ত্রির নাম ঘোষণা করা হয়, তখন ভারতসহ বিশ্বের বেশির ভাগ সংবাদপত্র, সাময়িকী বা টিভি চ্যানেল সাইরাসের নিয়োগকে ‘অপ্রত্যাশিত’ ও ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মূলত সাইরাসের স্বল্প পরিচিতিই এর কারণ। 
সাইরাস মিস্ত্রি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর রতন টাটা বলেছিলেন, সাইরাসের যোগ্যতা ও ধীশক্তিতে তিনি মুগ্ধ। তাঁর বিচক্ষণতা ও বিনয়ের প্রশংসাও করেন তিনি।
ভারতের বাণিজ্যবিষয়ক রক্ষণশীল সংবাদপত্র ‘মিন্ট’ বলেছিল, ‘মিস্ত্রির নিয়োগের বিষয়ে যেসব বিষয় কাজ করছে, এর অন্যতম হলো টাটা গ্রুপে তাঁর সংক্ষিপ্ত কর্মজীবন (সাইরাস ২০০৬ সালে টাটা সান্সের অন্যতম পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান)। আরেকটি বিষয় হলো, প্রতিষ্ঠানটির বাইরে তিনি প্রায় অপরিচিত।’
‘মিস্ট্রি এন্ডস, মিস্ত্রি বিগিনস’ শিরোনামে ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ যে সংবাদটি প্রচার করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘টাটা সান্সের বাছাই কমিটি যখন নির্মাণ ব্যবসায়ী, নিভৃতচারী ও স্বল্প পরিচিত সাইরাস মিস্ত্রিকে নির্বাচিত করল, তখন তা খুব বিস্ময়কর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। কমিটি সাইরাসের ভগ্নিপতি ও রতন টাটার ভাই নিয়োল টাটার বদলে বেছে নিয়েছে সাইরাসকে।’ 
কার্যত টাটায় যোগ দেওয়ার আগে সাইরাস পরিচিত ছিলেন ভারতের নির্মাণ ব্যবসায়। পেশাগত জীবনে টাটা ছাড়া আর কোনো বড় গ্রুপের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। 
২০১১ সালের নভেম্বর মাসে টাটা গ্রুপের একটি প্রভাবশালী কমিটি সাইরাসকে রতন টাটার উত্তরাধিকার হিসেবে বাছাই করে। ওয়্যারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়্যারউইক ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রুপ নামের গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এবং প্রভাবশালী ব্রিটিশ ব্যবসায়ী লর্ড সুশান্ত কুমার ভট্টাচার্য, আইনজীবী শিরিন ভারুচা ও টাটা সান্সের ভাইস চেয়ারম্যান এন এ সুনাওয়ালার ওই কমিটি ১৮ মাস ধরে টাটার পরিচালকদের কর্মজীবন ও অর্জন ঘেঁটে এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে একটি তালিকা তৈরি করে। এতে শীর্ষস্থান জয় করেন সাইরাস মিস্ত্রি। পরে কমিটি সাইরাস মিস্ত্রিকে টাটা সনসের ভাবী চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করে। পরের এক বছর তিনি রতন টাটার সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 
সম্প্রতি সাইরাস ক্রিসমাস উপলক্ষে টাটা গ্রুপের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গকে এক ই-মেইল পাঠান। চিঠিতে তিনি সব শ্রমিক, কর্মকর্তা ও পরিচালকদের শুভেচ্ছা জানান। সাবেক চেয়ারম্যান রতন টাটার ভূয়সী প্রশংসাও করেন তিনি। তিনি লিখেছেন, ‘রতন টাটার উজ্জ্বল নেতৃত্বে এ প্রতিষ্ঠানটি ভারতের একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান থেকে সারা বিশ্বে পদচারণা শুরু করেছে। নবসৃষ্টি, মান এবং যৌথতার শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয়েছে।’
সাইরাস বলেন, ‘চেয়ারম্যানের দায়িত্ব হস্তান্তরের পর অনেক কিছু পরিবর্তিত হলেও টাটা গ্রুপের মূল সত্তা অপরিবর্তিত থাকবে।’ ব্যবসায় সর্বোচ্চ নৈতিকতা প্রদর্শনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা হবে বলেও তিনি জানান।
সারা দুনিয়ায় টাটার পদচারণা শুরু হলেও ভারতের প্রতি প্রতিষ্ঠানটির অঙ্গীকার অপরিবর্তিত থাকবে। 
কর্মীদের উদ্দেশে সাইরাস বলেন, ‘আমরা এমন একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সময়ে বাস করছি যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রমে বাড়ছে। এ সময় সফল হতে হলে আমাদের চিন্তা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে হবে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যেসব বড় প্রতিষ্ঠান সাফল্যের মুকুট মাথায় দিয়ে অলস সময় কাটায়, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্রোতে সে ভেসে যায়।’ 

বেড়ে ওঠা
পাল্লোনজি সাপুরজি মিস্ত্রি ও পাটসি পেরিন দুবাস দম্পতির কনিষ্ঠ সন্তান সাইরাস মিস্ত্রি। ১৯৬৮ সালের ৪ জুলাই মুম্বাইয়ের বিখ্যাত পার্সি পরিবারে তাঁর জন্ম। জরাথ্রুস্ট ধর্মানুসারী সাইরাসের মা পাটসি ছিলেন একজন আইরিশ। তাই সাইরাস নিজেকে আইরিশ হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। 
পাল্লোনজি-পাটসি দম্পতির অন্য সন্তানেরা হলেন বড় ছেলে সাপুর মিস্ত্রি এবং দুই কন্যা লায়লা ও আলো। 
সাইরাস পড়াশোনা করেছেন মুম্বাইয়ের ক্যাথেড্রাল অ্যান্ড জন কোনান স্কুল থেকে। এরপর মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ থেকে স্নাতক পাস করেন তিনি। পরে লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজে থেকে পুরকৌশলে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর পাস করেন লন্ডন স্কুল অব বিজনেস থেকে। 
বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে সাইরাস মুম্বাইয়ের সমুদ্র তীরে মালাবার হিলের একটি বাসায় বাস করেন। সাইরাস বিয়ে করেছেন প্রখ্যাত আইনজীবী ইকবাল চাকলার কন্যা রোহিকা চাকলাকে। 
সাপুরজি পাল্লোনজি অ্যান্ড কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান এবং সাইরাসের বড় ভাই সাপুর মিস্ত্রি বিয়ে করেছেন আইনজীবী রুশি সেত্নার মেয়ে বেহরোজ সেত্নাকে।
টাটা পরিবারের সঙ্গেও সাইরাসের মিস্ত্রি পরিবারের সম্পর্ক আছে। সাইরাসের বোন আলোর বিয়ে হয়েছে রতন টাটার সত্ভাই নোয়েল টাটার সঙ্গে। 
আরেক বোন আলোর বিয়ে হয়েছে রুস্তম জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। 

সাইরাসের কর্মজীবন
প্রায় ২০ বছরের কর্মজীবনে সাইরাস নির্মাণপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিনোদন, বিদ্যুত্ ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন।
সাইরাস ১৯৯১ সালে তাঁদের পারিবারিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সাপুরজি পাল্লোনজি অ্যান্ড কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ভারতের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলোর তালিকায় মিস্ত্রির পরিবারের অবস্থান সপ্তম। তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৭৬০ কোটি ডলার (৬০ হাজার ৬২১ কোটি টাকা)। তিন বছর পর, সাইরাস ওই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে নিয়োগ পান। তাঁর সময়ে ওই গ্রুপের নির্মাণ ব্যবসা দুই কোটি ডলার থেকে বেড়ে ১৫০ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। 
ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে বিস্তৃত সাপুরজি পাল্লোনজি অ্যান্ড কোম্পানিতে বর্তমানে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ কর্মরত আছেন। 
টাটা সান্স ছাড়াও সাইরাস টাটা অ্যালেক্সি ও টাটা পাওয়ারের দায়িত্বে আছেন। তিনি ডি কিউ ইন্টারটেইনমেন্ট পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। 
এর আগে সাইরাস ফোর্বস গোকাক লিমিটেডের বহিস্থ নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি কনভারজেন্স মিডিয়া লিমিটেড ও ইউটিভি টুনস ইন্ডিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এখন সাইরাস মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের একজন ট্রাস্টি এবং ইম্পিরিয়াল কলেজ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং ইনস্টিটিউট অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্সের ফেলো হিসেবে কাজ করছেন। 

সাইরাস যেভাবে টাটায়
সাইরাসের দাদা ১৯৩০-এর দশকে টাটা সান্সের কিছু শেয়ার কিনেছিলেন। ২০১১ সালের নভেম্বরে এই শেয়ারের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ। দাদা মারা যাওয়ার পর সাইরাসের বাবা পাল্লোনজি মিস্ত্রি এই শেয়ারের মালিক হন। এককভাবে তিনিই হন টাটা গ্রুপের সবচেয়ে বড় অংশীদার। 
টাটার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই পরিচালিত হয় ট্রাস্টের মাধ্যমে। এত বড় শেয়ারের মালিক হিসেবে পাল্লোনজি মিস্ত্রি টাটার বিভিন্ন ট্রাস্টের এবং টাটা সান্সের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হন। ২০০৫ সালে পাল্লোনজি মিস্ত্রি টাটা সান্সের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকের পদ থেকে অবসর নিলে সাইরাস মিস্ত্রি ওই পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি টাটা সান্সের অন্যতম পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। 

মজার তথ্য
টাটা সান্সের ষষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিলেন সাইরাস মিস্ত্রি। নামের সঙ্গে টাটা নেই, অথচ টাটা সান্সের চেয়ারম্যান হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে সাইরাস দ্বিতীয়।
তাঁর আগে দায়িত্ব পালনকারী পাঁচজনের মধ্যে চারজনের নামের সঙ্গে টাটা উপাধি ছিল। কেবল ১৯৩০-এর দশকে টাটার চেয়ারম্যান নওরোজি সাকলাত্ভালার নামের সঙ্গে এ উপাধি ছিল না। 
নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করেন সাইরাস। তিনি গলফ খেলতে ভালোবাসেন।




টাটার কর্ণধার সাইরাস মিস্ত্রির জানা-অজানা - প্রথম আলো

No comments:

Post a Comment