TECH GURU, TECH-SCIENCE NEWS

"I celebrate myself, and sing myself,
and what I assume you shall assume,
for every atom belonging to me as good belongs to you."

Friday, November 23, 2012

চকলেট ও নোবেল তত্ত্ব!




যত বেশি চকলেট, তত বেশি নোবেল! বেশি করে চকলেট খেলে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কপাল খুলে যায়! মুখরোচক চকলেটের আদুরে নাম তাই ‘কালো সোনা’ বলেন এর ভক্তরা। এক খবরে বিবিসি অনলাইন জানিয়েছে, চকলেট ও নোবেল পুরস্কারবিষয়ক প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর পাঠকেরা তাঁদের মন্তব্যে এ বিষয়ে তাঁদের নানা তত্ত্ব যুক্ত করেছেন।
‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব দেশের মানুষ তাঁদের দৈনন্দিন খাদ্যের তালিকায় চকলেট রাখেন, সে সব দেশ থেকেই বছরান্তে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার হার সবচে বেশি। এ তালিকার শীর্ষে আছে সুইজারল্যান্ড। এরপর রয়েছে সুইডেন ও ডেনমার্ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অবশ্য এ তালিকার ওপরের দিকে।
নিউইয়র্কের সেন্ট লিউকস রুজভেল্ট হাসপাতালের উচ্চ রক্তচাপ বিশেষজ্ঞ ফ্রানজ মেসারলি এই গবেষণার জনক। জাতিতে সুইস নাগরিক এ বিশেষজ্ঞ হঠাত্ করেই তাঁর এক অবসর মুহূর্তে চকলেটের সঙ্গে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সম্পর্ক খুঁজে পান বলে দাবি করেন। তাঁর তথ্যমতে, দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে চকলেট থাকে এমন ২৩টি দেশের মানুষের মধ্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার হার সবচে বেশি।
মেসারলি তাঁর গবেষণার তথ্যগুলো সঠিক বলে দাবি করলেও তাঁর এ গবেষণায় যুক্তির প্রভাব খুব কম বলে স্বীকার করেছেন। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেরাসলি তাঁর গবেষণায় যুক্তির প্রভাব কম দেখলেও পাঠকেরা যথেষ্ট যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন তাঁদের মন্তব্যে। তাঁদের মধ্যে বাছাই করা মন্তব্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ম্যানচেস্টারের বাসিন্দা মাইকেল জনসনের। জনসন তাঁর মন্তব্যে লিখেছেন, ‘আমি যখন নিজেকে সময় দিই বা চিন্তামুক্ত থাকি, তখন সৃষ্টিশীল ধারণা আমার মাথায় আসে। চকলেট প্রয়োজনীয় কোনো খাবার নয়, এটা বরং আনন্দ অবকাশের বিলাসী খাবার। মানুষের হাতে যখন অবসর থাকে, তাঁর খাওয়া-পরা বা দৈনন্দিন জীবনের চাহিদার বিষয়গুলো যখন প্রভাব ফেলে না, সেই সময়টাতে সে সৃষ্টিশীল হয়ে উঠতে পারে বলেই আমার মনে হয়।’
কার্ডিফের লিজা প্রেস জানিয়েছেন, চকলেট খাওয়ার কারণেই তাঁর বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। যুক্তরাজ্যের বান্টু কানো জানিয়েছেন, চকলেটে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা যোগাযোগ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। সোমালিয়ার বাসিন্দারা হারে নামের এক ধরনের চকলেট খায়, যা তাদের বুদ্ধিমান করে তোলে। সেখানকার উপজাতি সর্দার যুদ্ধে যাওয়ার আগে চকলেট খান।
এথেন্সের অ্যাপোসতোলোস প্যাপোটিস জানিয়েছেন, ক্ষুধা পেলে গ্রিসের মানুষ চকলেট খায়, যা বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ। এতে খাবার তৈরির ও বাসন ধোয়ার সময় বাঁচে। পৃথিবী একমাত্র গ্রহ, যেখানে চকলেট আর বুদ্ধিমান প্রাণীর যৌথ অস্তিত্ব রয়েছে।
জর্ডানের আইয়ুব আইয়ুব জানিয়েছেন, চকলেট পুষ্টিগুণে ভরা ও উদ্দীপন ক্ষমতাসম্পন্ন। অল্প বয়স থেকে চকলেট খেলে মস্তিষ্কের গঠন ভালো হয়। ক্ষুরধার মস্তিষ্ক গড়ে ওঠে। 
যুক্তরাজ্যের জর্জ চিলটন জানিয়েছেন, ‘শীতপ্রধান অঞ্চলের মানুষ বেশি পরিমাণ চকলেট খায়। তারা উষ্ণ অঞ্চলের মানুষের চেয়ে কাজ করে বেশি। ৩৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় বাইরে বেশিক্ষণ কাজ করতে কে চাইবে? আমি বর্তমানে স্পেনে বাস করছি। এখানকার খুব বেশি মানুষ নোবেল পুরস্কার জেতেননি, কারণ এখানে সবাই সমুদ্রতটে সময় কাটাতে ব্যস্ত, এখানে চকলেট খাওয়ার লোক কম।’
মেক্সিকোর আন্দ্রে ভ্যালদেস জানিয়েছেন, মায়া সভ্যতার লোকজন বেশি চকলেট পান করত। তাদের চকলেটপ্রীতির কারণেই তাঁরা বিভিন্ন বিষয় উদ্ভাবন করতে সমর্থ হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের জোহানা জানিয়েছেন, চকলেট খেলে তাঁর বুদ্ধি খুলে যায় এবং ভালো লাগে বলে তিনি চকলেটের ভক্ত। অস্ট্রেলিয়ার মার্তা জানিয়েছেন, ‘চকলেটের সঙ্গে নোবেলের সম্পর্কের কথা জানি না।’ তবে যেকোনো অজুহাতে তিনি চকলেট চান।
সুইজারল্যান্ডের ব্রায়ান ম্যাকিন জানিয়েছেন. চকলেটে খেলে নোবেল পাওয়া যায় এ তত্ত্বে তিনি বিশ্বাসী। কারণ সুইজারল্যান্ডে সবচে ভালো মানের চকলেট তৈরি হয়।
চকলেট তৈরিতে ব্যবহূত কোকোয় বিদ্যমান ফ্ল্যাভোনয়েড নামের এক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে মোরালেস দেখেন, চকলেট খাওয়ার দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা ২৩টি দেশ থেকে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি।
এই তথ্য তিনি পান কাঠমান্ডুর একটি হোটেলে বসে, অবসর সময়ে। তিনি বলেন, ‘তথ্যগুলো পেয়ে খুব অবাক হয়েছিলাম। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, সবচে বেশি চকলেট খায় এমন দেশগুলোয় নোবেল বিজয়ী সবচে বেশি।’
অনেকে মেসারলির এই গবেষণাকে অযৌক্তিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁরা বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক গবেষণা হয়, যেখানে তথ্যের সত্যতা থাকলেও যুক্তির প্রয়োগ খুব কম। মেসারলির গবেষণার মাধ্যমে পাওয়া তথ্য তেমনই একটি ব্যাপার। মেসারলি নিজেও অবশ্য এই গবেষণার অযৌক্তিক দিকটি অস্বীকার করেননি।
২০০১ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন এরিখ কর্নেল। তিনি বলেন, নোবেল পুরস্কার সাধারণত অসাধারণ কোনো গবেষণা ও কাজের ওপর দেওয়া হয়ে থাকে। একটি দেশের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে চকলেট থাকার বিষয়টি সে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে নির্দেশ করে। একই সঙ্গে যে ধরনের উঁচুমানের গবেষণার জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়, সেই গবেষণাগুলোও ওই দেশটির শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির কারণেই হয়ে থাকে।
কর্নেল অবশ্য তাঁর নোবেল সাফল্যের পেছনে চকলেটের অবদান অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, ‘যদি ডার্ক বা কালো চকলেটের কথা বলেন, তাহলে অবশ্যই এর একটা প্রভাব আছে।’
অন্যান্য গবেষক অবশ্য মেসারলির চকলেটবিষয়ক তথ্য তেমন একটা আমল দেননি। বলেছেন, এতে ফাঁকফোকর রয়েই গেছে।
কানাডার ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ার পারিবারিক ওষুধ বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ইয়োনি ফ্রিডফ মেসারলির এ গবেষণাটি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘আমি এখনো পর্যন্ত চকলেটের মধ্যে এমন কিছু পাইনি, যার কারণে এটিকে আমি আমার দৈনন্দিন খাদ্যের তালিকায় রাখতে পারি।’ 

চকলেট ও নোবেল তত্ত্ব! - প্রথম আলো

No comments:

Post a Comment