
অনলাইন বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহে মরিয়া হয়ে উঠছে। সামাজিক যোগাযোগের প্রোফাইল থেকে শুরু করে মেইল ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর পিছু তাড়া করছে তারা। অনলাইন বিজ্ঞাপনদাতাদের গোপনে গোয়েন্দাগিরির বিষয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
আপনি ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, গুগল প্লাসে যখন নিশ্চিন্ত মনে কোনো বিষয় নিয়ে মন্তব্য লিখছেন, তখন অনলাইন বিজ্ঞাপনদাতারা কিন্তু বসে নেই। বিভিন্ন সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে আপনার ওপর গোপন নজরদারি করছে তারা। অনলাইনে আপনি কখন কী করছেন, ফেসবুকে কী লিখছেন, কী টুইট করছেন, বন্ধুবান্ধবের কাছে কী মেইল পাঠাচ্ছেন—সবকিছু নজরদারিতে রেখে আপনার একটা প্রোফাইল তৈরি করছে তারা। আপনার তথ্য সংগ্রহ করার পর সে অনুযায়ী আপনাকে বিজ্ঞাপন সরবরাহ করার লক্ষ্য তাদের।
প্রশ্ন উঠেছে, শুধু কি বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্যই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে?
ভারতের প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা জানান, অনলাইনে গোয়েন্দাগিরি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে শুধু বিজ্ঞাপন দেখানোতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। এখন সাইবার প্রতারণার কাজেও এ তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা জানান, অনলাইন থেকে ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহের এ পদ্ধতিটির একটি ভদ্রস্থ নাম হচ্ছে ‘ম্যাপিং’। অনলাইন ব্যবহারকারীদের আচরণ বিশ্লেষণ করে সে তথ্য কাজে লাগানোর পদ্ধতি এটি।
অবশ্য বাজার গবেষকেরা জানান, অনলাইন ব্যবহারকারীদের সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের প্রোফাইল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা দিয়ে অর্থ আয়ের পদ্ধতি বের করার ঘটনা অবশ্য একেবারে নতুন নয়। কিন্তু এ বিষয়টি ক্রমশ বাড়ছে। ২০১৪ সালে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে।
ভারতের ইগনাইট ডিজিটাল সার্ভিসেস নামের একটি অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী অতুল হেজ জানান, ম্যাপিং সাধারণত দুই ধাপে সম্পন্ন হয়। যেসব ওয়েবসাইটে শুধু ব্যবহারকারীরা কনটেন্ট দেখতে যান, সেখানে কতক্ষণ থাকেন এবং কী ধরনের কনটেন্ট দেখেন, সে তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। আর যে ওয়েবসাইটগুলোতে ব্যবহারকারী প্রোফাইল তৈরি করেছেন, সেখান থেকে তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অনেক সময় ব্যবহারকারীর ই-মেইল স্ক্যান করে এবং ই-মেইলে ব্যবহূত শব্দগুলোর ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়।
বাজার গবেষকেরা জানান, অনলাইনে কোনো ওয়েবসাইটের গ্রাহক আচরণ বুঝতে গিয়ে বিপণনকারীরা ম্যাপিংয়ের চেয়েও বেশি কিছু করে ফেলছেন। ম্যাপিংয়ের ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের জন্য যেসব সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা হয়, বেশির ভাগই তা ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন। অনেক ক্ষেত্রে এমন সব অ্যাডওয়্যার ব্যবহূত হয়, যা ব্যবহারকারীর অজান্তে ব্যক্তিগত সব তথ্য সংগ্রহ করে।
এইচডিএফসি নামের অনলাইন মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী সঞ্জয় ত্রিপাটি জানিয়েছেন, অনলাইন ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য প্যাকেজ আকারে কিনতে পাওয়া যায়। অনলাইন বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ীরা অনেক সাইট থেকে এ ধরনের তথ্য নিলামে কিনে নেয়। কোনো ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়ানোর জন্য অনলাইন ব্যবহারকারীদের আচরণ অনুযায়ী তারা বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা শুধু ডেটা বা তথ্য কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, তা নিয়ে না ভেবে ডেটা কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়েই বেশি ভাবেন।
আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন, তা আপনার অগোচরে গোয়েন্দারা যেমন যেনে নিতে পারে। তেমনি আপনার সঙ্গে থাকা স্মার্টফোনটিও অগোচরে আপনার সব তথ্য অন্যের হাতে তুলে দিতে পারে।
আপনার পেছনে কোনো গোয়েন্দা না থাকলেও মুঠোফোনের অ্যাপ্লিকেশনের লোকেশন ট্র্যাকিং বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সময় লোকেশন বা অবস্থান ট্র্যাক করার বিষয়টিতে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা। গবেষকেরা জানান, মুঠোফোন লোকেশন ট্র্যাকিং করে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেই তথ্য বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিক্রি করে।
সম্প্রতি বিবিসি অনলাইনের এক খবরে বলা হয়েছে, অ্যান্ড্রয়েডের জনপ্রিয় একটি অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করার প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)।
এফটিসি জানিয়েছে, প্রায় এক কোটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য অনুমতি ছাড়াই সংগ্রহ করেছে গোল্ডেনশোরস টেকনোলজি নামের একটি অ্যাপ নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান।
প্রযুক্তি গবেষকেরা জানিয়েছেন, গোল্ডেনশোরস টেকনোলজি যা করেছে তা অধিকাংশ অ্যাপ্লিকেশন নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই ঘটছে। জিপিএস ট্র্যাকিং করে ব্যবহারকারীদের নিয়ে বিজ্ঞাপন ব্যবসা করছে তারা।
No comments:
Post a Comment