
মুঠোফোন যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে তেমনি এর অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে মানুষের মধ্যে নানান বদভ্যাসও গড়ে উঠছে। অনেকের কাছে জীবনের স্বাভাবিক সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে মুঠোফোন। নানা কাজে প্রতিদিন অসংখ্যবার চোখ রাখতে হয় মুঠোফোনের পর্দায় বা পরীক্ষা করে দেখতে হয় কেউ কল করেছে কি না। মানুষের সঙ্গে বারবার যন্ত্রের এই ক্ষণিকের সাক্ষাৎকে গবেষকেরা বলেন, ‘মাইক্রো-ইন্টারঅ্যাকশন’। অভ্যাসবশত গড়ে ওঠা মাইক্রো-ইন্টারঅ্যাকশন মানুষের জীবনে যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠতে পারে।
মুঠোফোন-সৃষ্ট বদভ্যাসের মধ্যে একটি হচ্ছে টয়লেটে বসে মোবাইলে বার্তা পাঠানো, কথা বলার মতো ঘটনা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের চালানো এক জরিপে দেখা গেছে প্রতি চারজনের অন্তত তিনজন টয়লেটে গিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন।
মুঠোফোনের কারণে গড়ে ওঠা অভ্যাসের আরেকটি হচ্ছে সকালে ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল খুঁজে বেড়ানো। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যেখানেই মোবাইল ফোন রাখা হোক না কেনো সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে মোবাইল ফোনটি নেড়েচেড়ে দেখার অভ্যাস গড়ে তোলেন অনেকেই। শুধু ঘুম থেকে জেগে মোবাইল হাতড়ানোই নয়, ঘুমাতে যাওয়ার আগে সর্বশেষ যে কাজটি অনেকেই করছেন তা হচ্ছে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করা।
মোবাইলের পেছনে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা এখন অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অ্যাপ্লিকেশন কেনা থেকে শুরু করে স্মার্টফোনটিকে ফ্যাশন পণ্য হিসেবে ব্যবহার করতে অনেকেই এর পেছনে অঢেল অর্থ খরচ করছেন এখন।
মুঠোফোন হাতে থাকায় যেখানে সেখানে সবকিছুরই ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন ব্যবহারকারী। আর অযথা এই ছবি তোলার অভ্যাস পরিণত হচ্ছে বদভ্যাসে।
মুঠোফোনে গেম খেলা বা অতিরিক্ত সময় ভিডিও দেখার মতো অভ্যাসও তৈরি হচ্ছে। মুঠোফোনের চার্জার দেখলেই অনেক ব্যবহারকারীকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যায় যা তাঁর অভ্যাসের কারণে হতে পারে। মুঠোফোন ব্যবহারের ফলে দেখা যায় অনেকের কানে সব সময় হেডফোন দেওয়া রয়েছে। কান থেকে হেডফোন না খোলার কারণে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ কথা শুনতে পান না ব্যবহারকারী। কানে সব সময় হেডফোন দিয়ে রাখাটাও বদভ্যাসের পর্যায়েই পড়ে। অনেকেই আবার মুঠোফোনে চ্যাটিং আর বার্তা পাঠানোর কাজে সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকেন আর এই সব সময় ব্যস্ত থাকার বিষয়টি বদভ্যাস বলে বিবেচিত হয়। অনেকেই খাওয়ার সময় তার মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। খাবার সামনে রেখে মুঠোফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে সময় কাটানোটা তখন বদভ্যাসের পর্যায়ে পড়ে।
কারও জন্য যখন অপেক্ষা করতে হয় তখন সময় কাটানো কাটানোর উদ্দেশ্যে অনেকেই উদ্দেশ্যহীন ভাবে অ্যাপ্লিকেশন চালাতে শুরু করেন বা গেম খেলতে শুরু করেন। অনেকেই পাশে বসে থাকা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতায় যান না। এতে সামাজিকতা নষ্ট হয়।
অতিরিক্ত মুঠোফোনের ব্যবহারে মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি হতে পারে বলে গবেষকেরা সতর্ক করেছেন।
স্বাভাবিক সুন্দর জীবন-যাপনে মুঠোফোনের যন্ত্রণা থেকে দূরে থাকতে সাতটি উপায় মানুষের জন্য কাজে লাগতে পারে।
১. বার্তা নয়, প্রয়োজনে কথা বলতে পারেন
২. মাঝে মাঝে মুঠোফোন ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরতি দিতে পারেন
৩. একসঙ্গে একাধিক কাজ এড়িয়ে চলুন এবং নির্দিষ্ট কাজে মনোযোগ দিন
৪. খাবার সময় মুঠোফোনের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
৫. ছবি তোলার আগে নিজে উপভোগ করুন
৬. ছবি আপলোড করার আগে যাচাই করুন
৭. রাতে প্রয়োজনবোধে মুঠোফোন বন্ধ করে ঘুমাতে যেতে পারেন।
আরও পড়ুন: মুঠোফোননির্ভর জীবন থেকে মুক্তি যে ৭ পথে
No comments:
Post a Comment