TECH GURU, TECH-SCIENCE NEWS

"I celebrate myself, and sing myself,
and what I assume you shall assume,
for every atom belonging to me as good belongs to you."

Wednesday, September 25, 2013

গুগলে পরকীয়া ও রাজনীতির খেলা

গুগলের দর্শন নিখুঁত হলেও তাতে অসম্পূর্ণতাও রয়েছেগুগলের রঙিন লোগোটি দেখে হয়তো অনেকেই ভাবতে বসেন প্রতিষ্ঠানটির রঙিন আর সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশের কথা। হয়তো মনের পর্দায় ভেসে ওঠে গুগলের কর্মীদের ইচ্ছামতো কাজ করতে পারার চিত্র। বাইরে থেকে দেখলে গুগলকে একদল প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষের প্রতিষ্ঠান মনে হতে পারে। অনেকে হয়তো ভেবে বসতে পারেন, গুগলের নেতৃত্ব এমন প্রযুক্তি আদর্শে লালিত যারা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, প্রযুক্তি চশমা বা নানা প্রযুক্তিপণ্য নিয়েই ভাবছেন সারাক্ষণ। আসলে, গুগলের দর্শন নিখুঁত হলেও তাতে অসম্পূর্ণতাও রয়েছে। প্রযুক্তি ও ব্যবসাবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘বিজনেস ইনসাইডার’-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইরে থেকে গুগলকে যতটা রঙিন বলে মনে হয়, আসলে এর আড়ালের গল্পটা আরও বেশি রঙিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় গুগলের মাউনটেন ভিউ ক্যাম্পাসের চার দেয়ালের আড়ালে গুগল এক রাজনীতি আর যৌনতার আখড়া। গুগলে যৌনতা গুগলে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন এবং গুগলের মূল ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন এমন একজন কর্মীর বক্তব্য হচ্ছে, গুগলের আড়ালের গল্প যেন মার্কিন টিভি শো ‘গেম অব থর্নস’-এর মতো। যেখানে রয়েছে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে কর্তৃত্বের যুদ্ধ, উত্তরাধিকার নিয়ে সুচতুর পরিকল্পনা, যৌনতা আর রাজনীতি। গুগলের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রকাশ্য কোনো সংঘাত নেই সত্যি, তবে যৌনতা আর রাজনীতি? গুগল সূত্র জানায়, অবশ্যই রাজনীতির কূটচাল আর যৌনতার মতো বিষয়গুলো গুগলের সঙ্গে রয়েছে। গুগলের আড়ালের গল্প যাঁরা বলেছেন এবং লিখেছেন, তাঁরা সবাই বিষয়টিকে তুলে এনেছেন। গুগল যখন যাত্রা শুরু করেছিল সে সময়কার ঘটনা নিয়ে লেখক ডগলাস অ্যাডওয়ার্ডস তাঁর লেখা ‘আই অ্যাম ফিলিং লাকি: দ্য কনফেশন অব গুগল এমপ্লয়ি নাম্বার ৫৯’ নামের বইয়ে তুলে ধরেছেন গুগলের আড়ালের বেশ কয়েকটি ঘটনা। এ বইতে গুগলের সাবেক মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান হিদার করিনসের ভাষ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, গুগলের চারপাশের বাতাসে হরমোন উড়ছে এবং অনেকেই তাঁর ঘরের দরজা পর্যন্ত বন্ধ করতে ভুলে গেছেন। গুগলের প্রকৌশলীদের অনেককেই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় ধরা হয়েছে, যাতে তাঁদের চাকরি থাকার কথা নয়। কিন্তু গুগল কর্তৃপক্ষ কাউকে চাকরিচ্যুত করেনি। এর পর থেকে ধীর ধীরে গুগলের কর্মীদের মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এ সম্পর্কগুলোকে আবার ঠিক অস্বাভাবিক সম্পর্কের পর্যায়ে ফেলা যাবে না। স্বাভাবিক ও গতানুগতিক এ সম্পর্কের কারণে এর আগে কখনো কোনো কেলেঙ্কারি ছড়ায়নি। গুগলের কর্মীদের মধ্যে যদি সম্পর্ক গড়ে ওঠে তবে তাঁরা ডেটিংয়ে যান, পরে বিয়ে করে নেন বা সম্পর্ক ভেঙে ফেলেন। এ ধরনের সম্পর্কের বিষয়গুলো কবে ঘটল, কারও তেমন চোখে পড়ে না। তবে ব্যতিক্রম যে নেই, তা কিন্তু নয়। সম্প্রতি প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘অল থিংস ডিজিটাল’ একটি খবর প্রকাশ করে যেখানে গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিনের ব্যক্তিগত জীবনের একটি ঘটনা স্ক্যান্ডাল আকারে ছড়িয়ে পড়ে। গুগলের এক জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠায় সের্গেই ব্রিনের সংসার ভেঙে যাওয়ার খবর প্রকাশ করে ‘অল থিংস ডিজিটাল’। সের্গেই ব্রিন যাঁর সঙ্গে প্রেম করেছেন, ওই কর্মী কিছুদিন আগে হুগো বাররা নামের গুগলের আরেক কর্মীর সঙ্গে প্রেম করছিলেন। এ ঘটনার পর হুগো বাররা গুগল ছেড়ে চীনের শাওমি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ব্রিনের এ ঘটনার মতো গুগলে নিশ্চয়ই আরও ঘটনা রয়েছে। গুগলের কর্মকর্তাদের মধ্যে পরকীয়ার ঘটনা অনেক রয়েছে। সহকর্মী ও অধস্তনদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর বিষয়টি নতুন ঘটনা নয়। গুগলের এক যুগলের কথা শোনা যায় যাঁরা স্বামী-স্ত্রী হলেও গোপনে দুজনই আরও দুজনকে বিয়ে করেছেন এবং তাঁদের সন্তানও রয়েছে। এ ছাড়াও গুগলের চেয়ারম্যান এরিক স্মিডের স্ত্রীকে ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ একবার তাঁর স্বামীর পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র জীবনযাপন করি।’ গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতার রোমান্টিক সম্পর্কগুগল এমন একটি জায়গা যেখানে সবকিছুর ক্ষেত্রেই প্রচ্ছন্ন অনুমতি পান এখানকার কর্মকর্তারা। গুগলে কাজের সময় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে এক কর্মী বলেন, গুগল থেকে অনেক বিষয়ে ছাড় পাওয়া যায়। প্রযুক্তি ও ব্যবসায় দক্ষ কর্মীদের নিয়ে গড়া গুগলের মতো একটি কর্মপরিবেশে মানুষ পরস্পরের প্রতি আকর্ষিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। যাঁরা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বেন, তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধ করে আটকে রাখা যাবে না। ওই কর্মী দাবি করেন, শুধু গুগলে নয়, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের পেছনের গল্পও একই। গুগলে রাজনীতি এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার নাপা ভ্যালির কারনেরস ইন নামের হোটেলে দুদিনের এক অবকাশ বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন গুগলের বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। এ সময় এখানে উপস্থিত ছিলেন গুগলের বিজ্ঞাপন বিভাগের কর্মকর্তা সুসান ওজকিসকি, অ্যান্ড্রয়েড বিভাগের প্রধান অ্যান্ডি রুবিন, ইউটিউবের সিইও সালার কামাঙ্গার, গুগল ক্রোমের প্রধান সুন্দর পিসাই, গুগল প্লাসের কর্মকর্তা ভিক গানডোটরা। এ সময় গুগলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছিলেন তাঁদের নির্দিষ্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও। এ বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা অবশ্য গোপন ছিল। এ বৈঠকে গুগলের কোনো লোগো ব্যবহার করা হয়নি। এ দুদিন একসঙ্গে থাকার ফলে গুগলের সব বিভাগের প্রধানদের মধ্যে পরস্পরকে জানার পরিবেশ তৈরি হয়। গুগলের সব বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে যোগ দেন গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ। ল্যারি পেজ এ সময় গুগলের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘গুগলের লক্ষ্য অনেক দূর, কিন্তু গুগল কখনো এর নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারবে না, যদি এই বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তাদের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে ঝগড়া-লড়াই বন্ধ না হয়।’ ল্যারি পেজ আরও বলেন, ‘এখন থেকে গুগল কোনো মারামারি বা পরস্পরের সঙ্গে সংঘাত সহ্য করবে না।’ পেজ এ সময় আরও বলেন, গুগল যখন শুরু হয়েছিল তখনকার দিনগুলোতে গুগলের নেতৃত্বের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহ্য করেছি কিন্তু সে সময় গুগলের সমস্যাগুলো ছিল অল্প। সে সময় গুগলের বাজার দখল করতে যেকোনো কিছু করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। বর্তমানে বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে গুগল শীর্ষস্থানে চলে আসায় এর সমস্যাগুলো এখন বেশি। গুগল এখন যে অবস্থায় রয়েছে এর চেয়েও আরও ১০ গুণ বড় হতে হবে গুগলকে। নতুন বাজার তৈরি করতে হবে এবং সব সমস্যা সমাধান করতে হবে। গুগলের বিদ্যমান সমস্যা দূর করতে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার জন্য তাগাদা দেন গুগলের প্রধান নির্বাহী। শেষে ল্যারি পেজ বলেন, গুগলে রাজনীতি আর লড়াই চলতে থাকলে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ল্যারি পেজের কথার মধ্যেই গুগলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার গুগলে দীর্ঘদিন ধরে তো পরস্পরের সঙ্গে লড়াই করেই আসছি।’ আরেক কর্মকর্তা ওই সময় বলেন, ‘রাজা সহ্য করছে বলেই রাজপুত্ররা যুদ্ধ করছে।’ কথা অবশ্য ঠিক, গুগলের রাজা দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিষ্ঠানটিতে রাজনীতির খেলা সহ্য করছেন। বিতর্কের নাম গুগল গুগলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তা অবশ্যই চরম বিতর্ক করে তবেই নেওয়া হয়। নব্বইয়ের দশকে গুগলের শুরুর দিনগুলো থেকেই এ বিষয়টি চলে আসছে। গুগল নিয়ে লেখা বইতে ডগলাস অ্যাডওয়ার্ড লিখেছেন, ব্রিন ও পেজ দুজন কোনো সিদ্ধান্তের ঐকমত্যে পৌঁছাতে গালিগালাজ, তর্কবিতর্ক কোনো কিছুই বাদ রাখতেন না। নতুন কর্মীদের সামনেও দুজন প্রকাশ্যে তর্কেবিতর্কে জড়িয়ে পড়তেন। নতুন কর্মীদের তর্কবিতর্ক শুনতেন। শেষে বিতর্কে যে জয়ী হয়, তার কথা শোনা হতো। এ সময় গুগলে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বা নিয়ন্ত্রণ ছিল না। গুগলে তর্কবিতর্ক করে কাজ বাগিয়ে নেওয়া এবং হেরে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে বিভেদ সব সময় ছিল। তর্কবাগীশরা সব সময় গুগলের প্রধানের কাছ থেকে ভালো পদ পেয়েছেন। এখনো গুগলে এ ধারা রয়েছে। এ ধরনের বিতর্কে গুগলের অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বেরিয়ে এসেছে বলে মনে করা হয়। ধারণা করা হয়, গুগলে শেষ দিকে পণ্য ব্যবস্থাপক মারিসা মেয়ার ও ইউটিউবের সিইও সালার কামাঙ্গারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শত্রুতার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। বর্তমানে গুগলের চাকরি ছেড়ে ইয়াহুর প্রধান নির্বাহীর পদে যোগ দিয়েছেন মারিসা মেয়ার এবং ইয়াহুকে ঢেলে সাজিয়েছেন তিনি। গুগলের একটি সূত্র জানিয়েছে, মারিসা মেয়ার খুব ভালো তার্কিক। নির্দিষ্ট তথ্য খুব দ্রুত স্মরণ রাখতে পারেন তিনি এবং কম সময়ে অনেক দরকারি কথা বলতে পারেন। এদিকে, মারিসার সঙ্গে কথার প্রতিযোগিতায় কোনোভাবেই পেরে উঠতেন না কামাঙ্গার। তবে নতুন আইডিয়া দিয়ে তিনি সব সময় ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনকে নিজের পক্ষে রাখতে পেরেছিলেন। মেয়ারের দক্ষতা থাকলেও ল্যারি পেজের সঙ্গে কামাঙ্গারের ঘনিষ্ঠতা সব সময় তাঁকে জেতাতে সাহায্য করেছে। গুগলের রাজনীতিবিদ হিসেবে এখন গুগল প্লাসের ভিক গানডোটরা, সুন্দর পিশাই, অ্যান্ডি রুবিনের কথা সবার জানা। ভিক গানডোটরা তাঁর রাজনীতির গুণে গুগল প্লাস প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন, আর সুন্দর পিশাই কাজ করছেন গুগলের অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে। তবে গুগলে যে কারও জায়গা স্থায়ী নয়, ল্যারি পেজকে তুষ্ট করে টিকে থাকতে হয়, তা বুঝতে পেরেছেন মারিসা মেয়ার ও অ্যান্ডি রুবিনের মতো অনেকেই। তবে গুগল সূত্র জানিয়েছে, অ্যাপল নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে সহজে পৌঁছানো যায়, তবে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে সহজে তা হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে, এ রাজনীতি ল্যারি কেন টিকিয়ে রেখেছেন? সময়ই বলে দেবে গুগলে এ রাজনীতির খেলার ভবিষ্যত্ কী। http://www.prothom-alo.com/technology/article/50377/%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%87_%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE_%E0%A6%93_%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0_%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE

No comments:

Post a Comment